ফ্রান্সে প্রকাশিত বাংলা ওয়েবজিন। প্রকাশক : প্যাট্রিসিয়া গিদাস, ভ্যান, ৫৬০০০, ব্রিটানি, ফ্রান্স। সম্পাদক : নাসরিন-জয়া হক, চয়ন খায়রুল হাবিব। Contact : choygypsy@yahoo.com

Wednesday, November 18, 2020

লৌহজং-এর স্মৃতি দিঘলীর কথা

।।কামাল আহমেদ।।

"দিঘলী বাজার'' (আমার শৈশবে আঁকা ছবি)
সাদা--কালো জল রং, মাপ- ৬"x৪", সন- ১৯৮৩।
ছবির-- বাঁমদিক দক্ষিণ, ডানদিক উত্তর; নিচের দিক পূর্ব, উপরের দিক পশ্চিম! দক্ষিণে- পদ্মা নদী, উত্তর ধারটা ঐতিহাসিক গান্ধীর মাঠ নামে "বল খেলার মাঠ!''

আমাদের গ্রাম ভেঙ্গে নিয়েছে পদ্মার উত্তাল জলে,\
সচল জনপদ অনাদিকাল ওভাবেই সে গ্রাস করে চলে!
আমার গ্রাম হারিয়ে গেছে ঐ পদ্মা নদীর তলে,--
হারিয়েই থাকবে, জাগবে না সে আর কোনদিন বলে!
রূপ বৈশিষ্ট্যের তার যেখানে যা পাই আনি তা-ই তুলে,
জীবন-সত্তার আপনা সেই যেতে পারি না ভুলে!
এখনও গভীর অনুরাগে স্মরণ করি ইহা ঘুরে ফিরে,
খুঁজে পাই ওতে শৈশবের স্বাধীন-চলা-জীবনটারে!
সারাটাদিন ওর বুকের উপর ছিল যে কত পায়চারী,
খাওয়া ছাড়া যেনো ফেরা হতো-না নিজ ঘর--বাড়ি!
সেই গ্রামের "দিঘলী বাজার'' তার অলিগলি চারিদিক,
একবার না প্রদক্ষিণে কোন কাজে মন বসতো না ঠিক!
দুধ পট্টি, মাছ বাজার, চাউলের আড়ৎ, কাঠ পট্টি;
সব পৃথক পৃথক হলেও একটির পর-- ছিল যে একটি;
সেখানে নির্দিষ্ট করে হাঁট বসতো না বৃহঃপ্রতি কিংবা বুধ
ভর দুপুরে জাজিরা হতে নৌকায় আসতো পালার দুধ!
শীতের ঋতুতে শীতের সবজি---মুলা, কফি, কলই শাক;
গলির দু' ধারে বড় বড় টুকরিতে দেওয়া থাকতো ঝাঁক!
পদ্মার তাজা ইলিশ, পাটালিগুড়, ঘোল, মিষ্টি, আঁখ!
মাখনে ভাজা আটার রুটির স্বাদ ও-কথা না হয় থাক!
তার দক্ষিণে- পদ্মা নদী, পূর্ব উত্তর পশ্চিমে- জনবসতি,
হিন্দু--মুসলিমের পাশাপাশি চলায় ছিল সৌহার্দ-ভর্তি!
বর্ষায়- নদী বাজার সংলগ্ন খাল পানিতে যেতো ভরে,
লঞ্চ চলতো তথা সারিসারি নৌকা বাঁধা থাকতো পাড়ে!
বাজারের পূর্ব--পশ্চিম কোণে কাঠের সেতু ছিল দুইটি,
ডুকতে বাজারে লোকজনেরা ব্যবহার করতো সেটি।
কাপড়ের, কামারের, সুতা, মুদি, সেলুন, জুতার দোকান
তা ছাড়া আরো নানান দোকান-পাট ছিল যে সেখান--
বাজারের একপ্রান্ত হতে অপরপ্রান্ত লম্বা লম্বা বহু গলি;
গলির দু' পাশে ছিল ব্যবসায়ীদের ঐসব দোকানগুলি!
আর সোনারুর ছোট্ট-দোকানে বৃদ্ধ মশাইর "পাঠশালা'',
বাচ্চাদের নামতা পড়ায় কাঁপতো বাজার ভোরবেলা!
একদিক দিয়ে পদ্মা নদী, আরেকদিক দিয়ে চিকন খাল
বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে সমুদ্র হতে ভেসে আসতো বোয়াল!
পানি থৈথৈ পদ্মা, লঞ্চ ভিড়ত জেঠিতে---নামতো যাত্রী,
অমনি দিঘলী-ঘাটে জাহাজ--লঞ্চ চলতো দিন--রাত্রি!
শিক্ষার জন্য ছোট--বড়র বাজারে ছিল "নাইট স্কুল''
প্রবীণদের ঐ উদ্যোগের মানুষিকতা ভেবে হই ব্যাকুল!
খেলাধুলা সংষ্কৃতি আয়োজনে দিঘলী-বাজার-এলাকা,
গ্রাম হয়েও পিছিয়ে ছিল-না তখন শহর হতে ঢাকা!
রাতে- বাজার-পহরির ডাক আজও যেনো কানে বাজে,
একটু পরপর উচ্চকন্ঠে "ঐ কে রে কে রে''-বলত সে যে!
বলতে গেলে খোলা থাকতো মধ্যরাত পর্যন্ত বাজার,
কেনা যেতো সেখান হতে যাঁর যা প্রয়োজন দরকার।
কি পেতে চাই! গরম রসগোল্লা, আমৃত্তি---
অনেক রাত্রে! প্রস্তুত থাকতো সবই বেবল ঘোষের বড় কড়াইর পাত্রে!
বাজার হতে জীবন ধারণের পাওয়া যায় সব উপকরণ,
যাতায়াত থাকে তার সাথে তাই সকল শ্রেণীর জীবন।
নদীতে স্রোত- একটু করে ভাঙ্গছে পদ্মা; দিঘলী বাজার,
ঐ কথা ভাবলে বেদনাত্বক হয়ে উঠে প্রাণটা যে আমার!

কামাল আহমেদ
৬.৯.২০১৮

ফেসবুক 'জুলেখা সিরাপ' গ্রুপে চয়ন খায়রুল হাবিব শেয়ার করেন, ১২/০৯/২০ নিচের ইংরেজি লেখা সহ :

A Historical Sketch!
Kamal was my twin Konkon's batchmate in DU fine arts inst.Konkon was most probably known to Kamal and other batchmates as Natasha.Konkon went to DU fine arts inst in 1983 at the age of 17(born december).Kamal drew this sketch in 1983.He would also be 16 or 17 then.This sketch was about a village hut known as Dighli Bazar along the bank of the river Padma.The village and it's market submerged in the tidal serge of the mighty river witnessed by Kamal.I am amazed by Kamal's details and sharp focus in those early years.He narrated the atmosphere of the flooded village with a rollercoaster intensity.The houses and figures on the road who were there wouldn't be there anymore.Seeing the sketch leaves an eerie feeling!
I have been to great art museums and visited world class retrospectives.In arts I care more for raw intimate personal tune to craft.When you see both in one canvas and in gifted abundance, you can see real event is taken over by a nostalgic urgency.A romance is born and the river keeps coming back in our dreams and nightmares.
Choyon Khairul Habib
12/09/90
Brittany, France