ফ্রান্সে প্রকাশিত বাংলা ওয়েবজিন। প্রকাশক : প্যাট্রিসিয়া গিদাস, ভ্যান, ৫৬০০০, ব্রিটানি, ফ্রান্স। সম্পাদক : নাসরিন-জয়া হক, চয়ন খায়রুল হাবিব। Contact : choygypsy@yahoo.com

Thursday, November 19, 2020

ঝিনুক ও সমুদ্রের গান।নভেলা সিরিজ।

।।ফারহিন চৌধুরী।।


পর্ব: ৯

🍀
হাফ প্যান্ট আর হাফ হাতা লাল শার্ট পরে ছোট সাহেবের মতো তৈরি হয়ে আছে মিলান।সাথে মাথায় একটা হাস্যকর বিচ হ্যাট যার একটি কোণায় কিছু ঝিনুক ঝুলছে।বলতে অপেক্ষা রাখে না যে ঝিনুকগুলো আজ সকালেই মিলান বায়না করে আমিরের কাছ থেকে নিয়েছে এবং ক্যাফেতে বসেই টুপিটিতে মনের মাধুর্যের সাথে গোলাপ ফুলগুলোর পাপড়ি দিয়ে লাগিয়েছে।আমিরের মনটা পুরো জয় করে ফেলেছে এই বালক।এই অল্প পরিচয়তেই ফ্রি ড্রিংক্স অফার করে বসে আছে।

মিলান আমিরকে একটা ফরাসি নাম দিয়েছে- “আমি মিনিও” , যার অর্থ মিষ্টি বন্ধু।দুজনে দুজনের কাঁধে হাত রেখে হেলেদুলে ক্যাফের সামনে হাঁটাহাটি করছে। ওল্যাণ্ড রিসোর্টে গিয়ে সুট প্যান্ট বদলে আরামদায়ক কাপড় পরে এসেছে।ভদ্রলোক এখনো মোবাইলে ইন্টারনেট পাইনি বলে বেশ খিটখিটে মেজাজে আছেন।একটু পর পর মিলানকে ডেকে নিজের সাথে দাঁড় করিয়ে নানা পোস দিয়ে পেছনে সমুদ্র রেখে সেল্ফি তুলছেন।

আমিরকে ডাক দিয়ে একসাথে একটি চমৎকার ছবি তুলল ক্যাফেকে পেছনে রেখে।বাবাকে বলল “ সমুদ্র সব জায়গায় পাওয়া যাবে তবে আমিরের এই ক্যাফে বিরল! “ ছবিটি তুলেই একটি ক্যাপশান লিখে ফেলল “ জো তেম আমির“ - “ আমি তোমায় ভালবাসি আমির!”

এমন সময়ে সেই চেনা মুখ ~ রমলা সেন, তার বর্ণিল রঙিন শাড়ি পরে হাজির।রাতের রঙের সাথে রমলা সেনের গাঢ় নীল শাড়ি বেশ মিলে গিয়েছিল।মাথায় বেলি ফুল দিয়ে বেণী করেছে যার সুবাসে চারপাশ নেশাগ্রস্ত।রমলা সেনকে দেখে মনে হয় যেন প্রতিটি মুহুর্ত উপভোগ করতে পছন্দ করেন।জীবনের প্রতিটি সময় বেশ গুরুত্বপূর্ণ।ভালোলাগার জিনিসগুলো আনন্দের সাথে করতে পারলেই যেন জীবন সার্থক বলা যায়।তার শ্যামবর্ণ মুখে উজ্জ্বল হাসিটা ধ্রুবতারার মতো ফুটে উঠেছিল।মাজেদ নোটবুকটাতে রমলা সেনের এই রূপটাও লুকাতে পারলনা।রাতের আকাশে নীলের হেঁটে চলা।” মাজেদ, আপনার সমুদ্র অভিযান কখন শুরু হবে?” “ এখনই! চলুন সবাই।আমরা সৈকতের পাশ দিয়ে ক্যাফের পূর্বে ডান দিকটাতে যাব।” সকলে সম্মতি জানিয়ে সমুদ্রের সাথে নিশ্চুপ হেঁটে চলল।সমুদ্রের গর্জন আর কয়টা মানুষের অস্তিত্ব।” আরে, মাজেদ, দেখুন একটা কচ্ছপ বালির নীচ থেকে বের হলো ! কি অদ্ভুত দেখতে! “ “ ওদের রাজ্য বলে কথা! আমরা এখানে অতিথি, মিস রমলা।”

প্রায় আধ ঘণ্টা হেঁটে সবাই এক অভাবনীয় দৃশ্য দেখতে পেল।পুরো আকাশ জুড়ে হলুদ আলোর খেলা। জোনাকিদের আলোড়নে ছেয়ে আছে আকাশের প্রতিটি জায়গা।আমির ব্যাগ থেকে কাচের বোতল বের করে লাফিয়ে কতগুলো জোনাকি ধরে ফেলল।বোতলের মুখে মুখ রাখতেই সেই অদ্ভুত আলো তার মুখটা হাল্কা হলুদ রঙে রাঙিয়ে দিল।রমলা সেন দু হাত মেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল যেন কোন এক স্বপ্নের জগতে উড়াল দেওয়ার পালা।” ওহ্ মো ডিঙ! সে আন্ক্রইয়াবেল!( ওহ্ মাই গড! ইটস্ আনবিলিভেবল!) বলে উঠলেন ওল্যাণ্ড আর মিলান আমিরের থেকে আরেকটা কাচের বোতল নিয়ে জোনাকিদের সাথে লুকোচুরি খেলায় মেতে উঠল। মাজেদ এই সব দৃশ্য অবলীলায় তার কলমের কালি দিয়ে এঁকে চলেছে মুচকি হেসে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা জোনাকিদের সাথে বন্ধুত্বের জন্য লড়াই চলল।

“আপনি জানেন, সমুদ্রের পাড়ে জোনাকিদের এই খেলা দেখা আমার বেশ স্বপ্ন ছিলো? নবণীতা মুখার্জির খুব শখ ছিলো রূপকথার জগতের মতো সেই জোনাকিদের খেলায় আমাকে খেলতে পাঠাবেন।কাকতালীয় ঘটনা হয়ে গেল মনে হয়।” “ মাফ করবেন, আমি আপনার ডায়েরিটা পড়েছি।ইচ্ছেকৃতভাবে করিনি। সেদিন টেবিলে পড়ে ছিল খোলা অবস্হায় আর তখনি জোনাকির কথাটি চোখে পড়ে।” রমলা সেন ভ্রুকুটি করে একবার মাজেদের দিকে তাকালেন তারপর অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন। “ ভালই করেছেন, এইসব ইচ্ছে আর মুখ ফুটে বলতে পারতাম না। ডায়েরিটা বেশ মঙ্গল করেছে আমার।” কাচের বোতলে আটকে থাকা জোনাকিগুলোকে মুক্ত করে সমুদ্রের পাড়ে হেঁটে চলল পথিকের দল।মাঝে মাঝেই সমুদ্রের গর্জনের আড়ালে নিজেদের প্রতিধ্বনি শুনতে পারছিল। তখন এক অদ্ভুত প্রশান্তি সব যন্ত্রনাকে মিটিয়ে দিচ্ছিল।


ফারহিন চৌধুরী
১১/০৫/২০
ঢাকা