ফ্রান্সে প্রকাশিত বাংলা ওয়েবজিন। প্রকাশক : প্যাট্রিসিয়া গিদাস, ভ্যান, ৫৬০০০, ব্রিটানি, ফ্রান্স। সম্পাদক : নাসরিন-জয়া হক, চয়ন খায়রুল হাবিব। Contact : choygypsy@yahoo.com

Saturday, June 5, 2021

আরবি সাহিত্যের অনুবাদ এবং বামাতি সেন্সর!

।।তৃণা রাব্বানি।।

মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে সবচেয়ে বেশি আরবি পড়তে, লিখতে, বলতে পারা অঞ্চল হচ্ছে বাংলাদেশ।কিন্তু এদেশের আরবি জানা মাদ্রাসার শিক্ষক, ছাত্ররা আরবি সমকালীন সাহিত্য পড়বে না, অনুবাদ করবে না বলে অঙ্গিকার করে বসে আছে।আর এদেরকে এই অঙ্গিকারে পৌঁছে দিয়েছে বামাতি একাডেমি, মিডিয়া ও প্রাইভেটে মেশানো অক্ষশক্তি।

বামাতি হচ্ছে বামপন্থি মার্ক্সিস্ট বলে ভান করা যারা জামাতি ইসলামির পঞ্চম বাহিনী হিশেবে বাংলাদেশে মাদ্রাসাগুলোকে পুতুল নাচানো বুদ্ধিজীবির দঙ্গল।বামাতিরা আরব ভাতৃত্ববোধ ইত্যাদি বল্লেও না জানে আরবি, আর অখাদ্য যা অনুবাদ করে তা হচ্ছে চমস্কি, ফানন ইত্যাদি।বাংলাদেশের বই বিপণনের মূল কেন্দ্র বাংলা বাজার পড়ে আছে আল বেরুনী, বতুতা, রাবেয়া বসরিতে।বাংলা বাজার ও বামাতি দু পক্ষের কাছেই গিরিশ চন্দ্রের কোরান অনুবাদ অপাংতেও।বামাতিদের প্রিয় বুদ্ধিজীবীদের একজন আব্দুল্লাহ আবু সাইয়িদের প্রিয় কোরান অনুবাদক হচ্ছেন কোয়ান্টাম কোর্স চালানো ইমাম বোখারি।আব্দুল্লাহ আবু সাইয়িদ যেই দীপঙ্করকে তার বিপুল বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে আরো বিপুল বাতিঘর করতে দিয়েছেন, সেখানে বাংলাদেশের সমকালীন বাংলা সাহিত্যই পাওয়া যায় না, আরবি সমকালীন সাহিত্যতো দুরের কথা।দীপঙ্কর সাহেবের বাতিঘর যে চাহিদা, যোগান ও আবু সাইয়েদিও কারিকুলামে চলছে তাতে তাক ভর্তি পশ্চিম বঙ্গের খাদ্য, অখাদ্য এবং কর্তার লোক দেখানো ইচ্ছায় ইমাম বোখারি, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, শির্শেন্দু ইত্যাদি।

এই বামাতি, বাতিঘর চক্র পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের সমকালীন সাহিত্যের ধারাবাহিকতা নষ্ট করবার পাশাপাশি অনুবাদের নবায়নও নষ্ট করে দিয়েছে।অথচ এখানে ৭০০ বছর আগে জুলেখা, ইউসুফ প্রেম কাব্য অবলম্বনে বাঙালি শাহ মুহাম্মদ সগির প্রথম বাংলা উপন্যাসটি লিখেছিলেন। সগিরের যেরকম খবর নেই, সেরকম তার কাহিনীর সমকালীন নবায়নে যে চয়ন খায়রুল হাবিবের নাট্যত্রয়ী জুলেখা ট্রিলজি হলো, তাও রকমারি বাদে বাংলাদেশের কারো খবর নেই।

নগিব মেহফুজ, নিজার কাবানিদের প্রজন্মের পর আরব সাহিত্যে একের পর এক শক্তিশালী নারী লেখক এসেছেন। আসিয়া জেবার, নাসিরা বেলৌলা, লেইলা সেব্বার, আহলান মোস্তেঘানি, ইয়ামিনা মেশকারা, হুদা দারুউইশদের লেখা পাওয়া যাবে পশ্চিমের যে কোনো ভালো বইয়ের দোকানে, পাঠাগারে।বাংলাদেশে যে ফিলিস্তিনিদের নিয়ে এতো রাজনীতি করা হয় সে ফিলিস্তিনি সমকালীন বা প্রধান সাহিত্যিকদের অনুবাদও করে না আমাদের আরবি জানা লোকজন এবং আরবি না জানা বামাতিগন।আরবি সমকালীন সাহিত্যের যট্টুকু আমরা বাংলাতে পাই তা পাই ইংরেজ, ফরাসি অনুবাদকদের দৌলতে, ইংরেজি থেকে অনুবাদ করে। ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের লেখক মাহমুদ শুকাইর, সুয়াদ আমিরি, শাহার খালিফা, রাজা শেহাদে যা লিখছে তা শত অবরোধ ভেদ করে পৌঁছে যাচ্ছে পশ্চিমি পাঠকের কাছে, কিন্তু বাংলাদেশে তার খবর নাই।

বাংলাদেশে খবর বলতে মুসলিম ব্রাদারহুড, এরদোগান, ইমরান খান। এতে করে বোঝা যায় যে সেন্সরটা পশ্চিম থেকে আসছে না, ঘরের ভেতর সিঁধ কেটে বামাতিরা বাংলা বাজার থেকে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে সেন্সর সফলভাবে প্রয়োগ করেছে এবং সংখ্যালঘুরাও সে সেন্সরে মন্দের ভালো যট্টুকু করে খাওয়া যায় তা তো করছেই, অনেক সময় বামাতি মনোরঞ্জনে আরো বেশি বেশি করে করছে।এই মনোরঞ্জনটুকু আবার বাংলা ভাষার প্রমিত চলিষ্ণুতাকে পশ্চাদপদ করতে আঞ্চলিক হৈছে, খাইছে প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক ছকে বাধা।এদের ধারনা এরকম, বামাতি বুদ্ধিজীবী এবং তাদের রাজনৈতিক হ্যান্ডলারেরা দামি গাড়ি চড়বে, প্রাসাদে থাকবে, বনেদি পাড়ায় হুইস্কির সাথে শর্মা, ফালাফেল খাবে, কিন্তু তাদের মানব ঢালকে তারা আম জনতা বলবে, আর সেই কথিত আমজনতা হাজার বছর আগের পুথি পাঠে ব্যাস্ত থাকতে হবে।

আরব বসন্ত হয়েছে, সে বসন্তে ফুল ফোটে নাই বিশ্ব_বামাতিদের জামাতি, আইসিস, তালেবানি জুজু দেখিয়ে মুর্সি, এরদোগান, ইমরানদের পথ তৈরিতে সহায়তা করবার কারণে।প্রকল্পগতভাবে যারা সৌদি, কাতারি পেট্রডলার নিয়ে মাঠে নেমেছে, বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে তাদের সবচেয়ে বেশি দরকার পড়েছে সমকালীন সাহিত্যের লেনদেন আড়াল করতে।এই প্রকল্পের চরম অংস হিশেবে দেখা গেছে ব্লগার হত্যা, আর ধারাবাহিক অংশ হিশেবে এডয়ার্ড সাইদকে দেখিয়ে আরবি সমকালীন সাহিত্যকে আড়াল করতে।ফেসবুক জুলেখা সিরাপ গ্রুপে, তরঙ্গ ওয়েবজাইনে নিজার কাবানি, দুনিয়া মিখাইলদের আমরা পেয়েছি পশ্চিমি প্রকাশনার সূত্র ধরে খায়রুল আলম চৌধুরীর হাত থেকে।

দেখা যাবে ইসলাম নিয়ে যারা রাজনীতি তথা ধর্ম ব্যবসা করছে, মুসলিম ভাতৃত্বের জিগির তুলছে, মেয়েদের লাইফস্টাইল পশ্চাৎপদ করতে চাপ দিচ্ছে, হরেদরে তারা বিশ্বায়ন বিরোধী।যত তাড়াতাড়ি ভারত, বাংলাদেশ কোভিড ভ্যাকসিন পাচ্ছে, তত তাড়াতাড়ি তারা বাংলাদেশের পাঠকের হাতে আরবি সমকালীন সাহিত্য পৌছাতে দেবে না। বাংলাদেশে শিক্ষা বৈষম্য এ লক্ষ্যে তৈরি না হলেও, বাই ডিফল্ট শিক্ষা বৈষম্যের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াতে আমাদের পাঠকেরা সমকালীন বিশ্ব সাহিত্য সম্পর্কে জানতে পারছে না।

সব দোষ কি বামাতিদের?হ্যাঁ, এক্ষেত্রে দোষটুকুর গরিষ্ঠভাগ বামাতিদের ঘাড়ে চাপে।এদের মজ্জাগত বিশ্বাসঘাতকতা জনতা জানে বলেই, সেন্সরকে এদের হাতিয়ার বানাতে হয়েছে।বাংলা ভাষা উপনিবেশিক সময়ে যে পরিমাণ সমকালীন বিশ্ব সাহিত্যের অনুবাদ দেখেছে, স্বাধীন দেশে তার ধারে কাছেও সমকালীন বিশ্ব সাহিত্যের অনুবাদ হয় নাই।যে দেশে এত বেশি আরবি জানা ছাত্র, শিক্ষক তাদেরকে এই দিকে উদ্বুদ্ধ হতে যারা বাধা দিচ্ছে এবং বাধা দেবার প্রক্রিয়া তৈরি করছে, তারা বাংলাদেশের এবং বাংলা ভাষার বন্ধু নয়।

।।তৃণা রাব্বানি।।