ফ্রান্সে প্রকাশিত বাংলা ওয়েবজিন। প্রকাশক : প্যাট্রিসিয়া গিদাস, ভ্যান, ৫৬০০০, ব্রিটানি, ফ্রান্স। সম্পাদক : নাসরিন-জয়া হক, চয়ন খায়রুল হাবিব। Contact : choygypsy@yahoo.com

Saturday, June 5, 2021

আগুন পাখি, কবিতা সিরিজ

।।নভেরা হোসেন।।


.

তোমার জানালায় কৃকলাস ম্রিয়মাণ

জলপাই গাছ, সকালের রোদ, শিশুর চিৎকার

ছিঁড়ে ফেলছে কুয়াশাচ্ছন্ন রাতের পৃথিবীকে,

কবিতা এবং দীর্ঘশ্বাসের বার্তা

কখনো কখনো লোকালয়ে অশ্রু জমিয়ে দেয়

না-পাওয়া যত আর্তি

তোমাকে জলে ডোবায়, আগুনে পোড়ায়

পোড়ো বৃষ্টি নাস্তিতে

রোদে পুড়ে, জলে ভিজে হও শাণিত

যেন এক তলোয়ার

ছিঁড়ছে কাচের পর্দা

সময়ের বাঁকানো দাঁত

দাও গেঁথে পোড়া চোখ লুসিফার

ভূতগ্রস্ত অস্থিতে


.

সে ছিল সবুজ পোশাকে ঢাকা

পায়ে সমতল চপ্পল

এবং সে ছিল না যখন বইয়ের স্তূপ

ভেঙে পড়ছিল হৃদপিন্ডের অলিন্দে

অলিতে-গলিতে

আহা আমাদের শহরেও ভোর হয়

দুপুরে গন্ধ ছড়িয়ে সাদা ভাত

পড়ে থাকে গোলাপি ডিশে 

পুড়ে পুড়ে চিলের ডানা

ছাই হয়ে আসে

বাতাসে এবং জলের আগুনে

থাকো তুমি মিনারে, বৃষ্টির ফোঁটায়

স্রোতে ভাসা গাঙচিল নদীর আকাশ

থাকো তুমি মজ্জায়

মরীচিকায়...


.

আগুনখেকো তুমি

আগুনমুখো নদী

সরসর সরীসৃপ

মাথাভর্তি কোঁকড়া চুল

ঠোঁটে গোলাপি আভা

পথ একটা দেখা যাচ্ছে

পথ একটা খুলে গেল

একদা সেখানে ছিল নীরবতা

এবং ছিল না কোনো গন্দম ফল

যা খেয়ে বানালে ড্রাগনের পৃথিবী

ক্রমে ক্রমে এইরূপ ছায়া গজায়

যেন আর দেহ নাই

দেহহীন কায়াহীন ব্রহ্মার চোখ

নলাকার দণ্ড, নল আকার পৃথিবী

তাই খেয়ে খেয়ে স্মৃতি ছারখার

জ্বলে চোখ জ্বলে বিস্ফার

জ্বলে লুসিফার

আগুনের চোখ

.

রাত ভোর হয়ে এল

কিসমিস, আখরোট সব ছিল পকেটে ভরা

বোতলের ছিপি খুলতেই অর্গানিক ড্রিঙ্কস

তুমি কি ঐখানে ছিলে?

কালো শীতল মেঝেতে?

চারপাশে বহু পথ, কবিগান, সমগীত

আমিও ছিলাম তোমার সাথে

এক বিন্দু সর্ষে হয়ে

সর্ষের ভূত

কোনো কথাই আর জানা যাবে না

অথবা যা কিছু জেনেছ

তাও তো বানিয়ে বানিয়ে

রাক্ষসপুরীর ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী

ঘুমন্ত ডালিমকুমার

কেউ তোমাকে জাগাতে পারেনি

তুমিও পার নাই কাউকে

লুসিফার তবু রাত জেগে থাকে চোখে আগুন

লুসিফার তবু ঘুমিয়ে পড়ে

হাতে মৃত্তিকা


.

এখানে অনেক রোদ্দুর, বারুদ, লোবানের গন্ধ

পথে পথে সোনাঝুরি

রাধাচূড়া, অম্লজান

ছুঁয়ে থাকো প্রেম পারদ

নকল এনামেলে বানানো দাঁত

ছুঁয়ে থাকো হর্ষ বিষাদ

জল্লাদখানার আর্তনাদ

ছিঁড়ে টুকরো করে বানিয়েছ যত মন্দির মিনার

তার শরীরে রক্তের গন্ধ

তার শরীরে মীনজাতক

জলে জলে সলিল সমাধি

করাতের দাঁত, করাতের চোখ

কাটো পুস্তক, আসমানি কিতাব

ভেঙে দেখো কোথায় সে নরকের কীট

রে পাষ- আগুনের আত্মা

পুড়ে ছাই

পুড়ে পুড়ে নাই হয়ে যাও সোনাভান


.

পথে হীরার টুকরো শ্বাপদ,

প্রেমিকের ঠোঁট, আপেলের গোলাপি আভা

তোমার মনে খুব গাঢ় কোনো রঙের স্তূপ

ছড়ানো ছিটানো রেশমি চুল

পায়ে রোদের চিহ্ন

চোখে সময়ের ডানা

লুসিফার তোমার বুকের মধ্যে উষ্ণধারা

চোখে অনির্ণীত বায়োস্কোপ


কালকেতু এবং ফুল্লরা তোমাকে নিয়ে যাচ্ছে অমৃতনগরে

সেখানে নটরাজ, বেহুলা লখিন্দর

কত স্বপ্ন-বাসর ভাসে অগাথ জলে

এইসব লোকালয়, ফুলের মুকুট তোমার নয়

তুমি শরৎ এবং বর্ষার কদম

নুয়ে থাকো জলের আড়ালে

মেহগনির কালো শরীর

তোমাকে জড়িয়ে নেয়

রাতের মধ্যমায়

.

তুমি কথা বলছ না

তুমি একবারও কথা বলছ না

তুমি নীরব হয়ে আছ

নীরবতা আজ কথা বলছে

নীরবতা আজ ভাষা পেয়েছে

তুমি জানতে না যেসব এল-দরাদো হারানো দরজা

খুলে যাচ্ছে সব

সিংহ দরজার ঐপাশে মসি হাতে নারী

এই পাশে অসি হাতে পুরুষ

সকলেই কবিতাভঞ্জন

সকলেই মিথুন রাশি

নীল নীল তারা

একটা দুটো তারা ঝরছে এরকম দিনে

নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে

ত্বকের উপরে ছেনি-কাঁচি

ত্বক ত্বককে চাইছে

ঠোঁট উষ্ণ ঠোঁটকে

নিমেষে সব বদলে গেল

কুলা-কান-কাকাতুয়া

জ্বলন্ত অগ্নিকু- পুড়ছে

ময়ূর-ময়ূরী-রাজহাঁস,

চোখ চোখকে দেখছে

বৃষ্টি অনাগত

তোমার শরীরে উল্কা

হাতে বাজুবন্দ

হাতে তলোয়ার

ফিরে যাচ্ছ কয়েক শতক আগে

তুমুল যুদ্ধ, সেনাপতি নিহত

আবাবিল পাখিসব পাথর ছুঁড়ছে

এইসব পাথর ধুলা ধুলা খেলা

এইসব স্মৃতি মধু মধু খেলা

মধুর কৌটায় লুকানো আছে প্রাণ-ভোমরা

যদি পাও অষ্টরম্ভা

যদি না পাও কাঁটার মুকুট

খুঁজে খুঁজে হয়রান প্রতিটি আত্মা

সবকিছু মুছে দাও

চক দিয়ে ঘর কাটা

শ্লেটের শরীর

আঁশ দিয়ে গাঁথা মাছ

লুসিফার তুমি নীরবে ঘুমাও

তোমার জানালায় জোড়া ঘুঘু

তোমার শরীরে আলো

অন্ধকারের খোঁজে


.

প্রিয়তম শহরে আজ বৃষ্টি নেমেছে

সুউচ্চ মিনার, বৃক্ষ, স্বচ্ছ কাচ

ধুয়ে যাচ্ছে জলের ধারায়

তোমার চোখ হৃদপি- কড়ে আঙুল সব ভিজে চুপচুপ

শহরের বুকে আজ বৃষ্টি নেমেছে

একটা জর্দার কৌটা, সিলিকন চিপ

শাড়ির অর্ধভাঁজ, কালো স্তন

বৃষ্টিতে ভিজছে

রিকশার হুট, গ্যাস পাম্প, সিগারেটের প্যাকেট ভিজছে

এবং তুমি, তোমরা যারা আজ নেই

এবং যারা আছ

সকলেই ভিজছ প্রখর বৃষ্টিতে


.

লুসিফার এখানে অনেক মাটির পাত্র

ওখানে তামাটে শরীর

আজ নিবিড় কোনো আলিঙ্গন তোমাকে টানছে না

ভোটের, ব্যানার, অয়েল পেন্টিং, চামচের ঠোঁট

এইসব পড়ে আছে মগজের কোণে

হৃদস্পন্দনের উচ্চহার তোমাকে নুইয়ে রেখেছে

সারি সারি কৃষ্ণচূড়া, জারুল

রাজপথের দুপাশে

এখানেও বলাৎকার হয়

শিশ্নের ডগা ঢুকে পড়ে কোমল শরীরে

কোকিলের ডাক এখনও শোনা যায়

গ্রীষ্ম সমাগত তবু তুমি ছায়া হারিয়েছ

গোলাপি শাল

বাতাসে রক্তের গন্ধ

এই হাত হত্যা করেছে সহস্র হাত

দুমড়ে-মুচড়ে ভেঙেছে স্পাইনাল কর্ড

রাষ্ট্রের যন্ত্র, যন্ত্র-মানুষ ছিঁড়ে নিয়েছে ফুলের গর্ভকেশর

হাত হাতকে বাঁধছে, চোখ চোখকে ঢাকছে

পাতাবাহারের গন্ধহীনতা খাবারের প্লেটে

হান্ডি বিরিয়ানি আর মাটন চাপ টিভি স্ক্রিনে

চোখ তুমি খুলে নাও

ঠোঁট তুমি স্পর্শ করো

রাখো হাতে হাত

লুসিফার তুমি কেউ নও

কখনো ছিলে না

তবু আছো খরা বর্ষণে

মারি মৃত্যুতে, জীবনে

তুমি নাই ভুল এবং শুদ্ধতে

ত্রিকালনাথ ছুঁয়ে আছে তোমার

ভ্রূ-যুগল


১০.

বিরিশিরি কোনোদিন যাইনি, গজনী, সিকিম

কোথাও না

শীতের রাতে দেখিনি ঈগলু ঘর

তুমি ছিলে সর্বক্ষণ রক্তের ভেতর

চনমনে বিকাল, দীর্ঘ রাত

শুয়ে শুয়ে পায়ের পাতায় পা

সারি সারি সেগুনের -ায়মানতা

এইসব বৃক্ষ-বৃক্ষা, নদী, ইট-পাথর

সবকিছু ঢুকে আছে মজ্জায়

তোমার উজ্জ্বল চোখ, নরম চুল

আমাকে আর্দ্র করে রাখে

লুসিফার হয়ো না উচাটন

শুষে নিচ্ছি চর্ম চক্ষু

ওষ্ঠ জিহ্বা

যত ঝড় ওঠে, ঝঞ্ঝা

শরৎ বসন্ত

এইখানে একবিন্দু অমিয়জল

এইখানে একরাশ ফুলের শয্যা

যা ছিল স্বপ্নে, প্রতিবাস্তবে

জ্বলন্ত শিশ্নের আগুন তাকে জাগিয়ে তুলেছে

আমিরূপ তুমি আর তুমিরূপ আমি

একাকার হয়ে ধুন্ধুমার

এখানে অপর হয়ে ওঠে নিজ

অপরাপর সকলেই ঢুকে পড়ে কপাট খুলে

খিলানের এইপাশে মধুকূপি ফুল

গর্ভকেশর ছিঁড়ে থিরথির কাঁপছে

ছুরি দিয়ে কেটে কেটে লহমায়

শ্যাওলায় ঢাকা পথ এঁকেবেঁকে চলে গেছে দূরদেশ কালকূট

তুমিও চলেছ পথ

সরবন, বেহেস্তের ঐপারে

এইপারে কালো দেশ, কালো কালো নেকাবে ঢাকা

বিরিশিরি যাইনি কখনো

গজনী, সিকিম কোথাও হয়নি যাওয়া


১১.

রাতগুলো জেগে আছে

ফায়ার ফায়ার

রেলক্রসিং পার হয়ে বাঁশবন

চাঁদের আলোয় ঝলসে উঠছে কাটা রাইফেল

কার্তুজ, গুলির খোসা

গাছের আড়ালে লুকিয়ে মানুষ

ট্রেঞ্চে, জলে, স্থলে

মানুষের খুলি, ভগ্ন হাত

যুদ্ধের দামামা ছিল এখানে

কিছু থেমে গেছে

কিছু রয়ে গেছে

বিস্ফোরণের শব্দে তোমার ঘুম ভেঙে যায়

থেমে থেমে বোমার আর্তনাদ

ঝলসানো মুখ, বিস্ফোরিত স্তন

জঙ্ঘার হাড় বেঁকে ঢুকে গেছে মেরুদন্ডে

রাতগুলো জেগে আছে


কিছু ফায়ার থেমে গেছে

কিছু রয়ে গেছে আগুনের ফুলকি...


১২.

প্রিয় রাত প্রিয় রাত্রি

তোমার বারান্দায় পাতাঝাঁজি, শ্যাওলার আস্তরণ

হিজলের কালো শরীর জলের দ্রাঘিমায়

নুয়ে থাকা বৃতি, পাপড়ি

ওখানে শীৎকারধ্বনী একা জেগে থাকে

এখানে স্তনের নীরবতা

রোদ্দুর, ঘাস, মেঘ

পায়ে পায়ে কত কোমলতা

একটানে খুলে ফেলো পোশাকের কারুকাজ

উত্থিত লিঙ্গ, উষ্ণ ঠোঁট

মিশে থাকো মধ্যমায়

রাত বাড়ে, ঘুমন্ত শহর

ঘুমিয়ে থাকো আগুনের চোখ

জেগে ওঠো জ্বলন্ত বিস্ফার

আগুনের লুসিফার

১৩

কথামৃত, চরণামৃত কতশত পুস্তক আদি জ্ঞান

মৃত চোখ চেয়ে থাকে

ঘুমন্ত সরবন, তৃষিত ওষ্ঠ

জখম আত্মার নীরব ক্রন্দন

এসব দুমড়ে-মুচড়ে জেগে ওঠে নীল সাগর

মাটিতে চাবুকের দাগ, জিহ্বায় আদিরস

কে তুমি ঝঞ্ঝা, উল্কার পতন

কাচের পর্দা, যবনিকা?

দেয়ালের ধার ঘেঁষে বেড়ে ওঠো

বটের অযুত ছায়ায়

কে তুমি চোখ কেড়ে নাও

শুয়ে থাকো হৃদপি-ের অপর পাশে

শত শত ক্রেঙ্কারধ্বনি, শৈবাল হ্রদ

এপারে মহাস্থান, মহা মহা গড়ের সমাধি

ঠনঠনিয়ার রাতের জমাট 

লুসিফার তোমাকে খুঁজে পাই না তো

অথবা তুমি ছিলে গনগনে উত্তাপে

মোম হয়ে গলে পড়ি মোমের শরীরে

না দেখো সে অগ্ন্যুৎপাত

ঝরোকার কাচ দিয়ে জঙ্ঘার শ্বেতস্রাব

ছিঁড়ে-খুঁড়ে লোহার খাঁচা

বানিয়েছি ছায়া এক তোমার মতন

তাকে নিয়ে সমস্ত রাত্রি

এইসব মধুরস, যক্ষের ধন

কে তুমি হারালে বসন্তবাতাসে

পর্বতা-পর্বতা ঘরের সমীপে?

লুসিফার তুমি কেউ নও কখনো ছিলে না

আগুনের শরীর হয়ে জ্বলতে থাকো

                            নিভবার কালে


১৪.

প্রিয়তম এইখানে মরুঘাস, লোবানের গন্ধ

শার্দূল, বৃষ, সুতানলি সাপ

কেটে কেটে বানাও মন্দির, মিনারের কঠিন শরীর

তারকাঁটায় গেঁথেছ কত কোমল চোখ

অথচ আমাদের কোনো তারকাঁটা ছিল না

পরস্পরকে বিদ্ধ করেছি জঙ্ঘা লিঙ্গের অস্থির উত্থানে

তারপর মেঘের শরীর

ভেসে ভেসে অজানার পথে

পায়ে কত কাদার ছোপ

জুতোয় রক্তের ধারা

প্রিয়তম তোমাকে আজ কী নামে ডাকি?

জয়তুন, জারুল, মধুকূপি ঘাস  

যে-নামেই ডাকি না কেন

পথে মৃগনাভি, চোরকাঁটা সারি সারি

পায়ে বিঁধে রক্ত ঝরাল

বুকের বাম পাশে করাতের দাগ

কেঁপে ওঠা আঙুলের ভাঁজে

একবিন্দু সর্ষের ভূত

এই ছিলে তুমি

আছো ভেতরে কালো ভূত হয়ে

জানি না কে সে ভূত তাড়াবে

নাকি কোনো ওঝা হয়ে এসেছিলে কাল

নিজেকে ছাড়াও নিজের দ্রোহে

আমি শুধু শীতে কাঁপি, রোদে পুড়ি

হিজলের লাল ফুল চোখে মেখে

বাজাই একতারে ঝাপটানো পাখা

অন্য তারে চাতকের চাওয়া

সেই সুর ওষ্ঠে মেখে

সেই সুর পান করে

আমি এক        পা ধা নি সা

সা নি ধা পা      মা গা রে সা


।।নভেরা হোসেন।।

২০১৫/ঢাকা


'আগুন পাখি' নামে লেখক হাসান আজিজুল হকের একটি উপন্যাস আছে , আমার লেখার সাথে তার কোনো সম্পর্ক নাই , মনের অজান্তেই এই নামকরণ।নভেরা হোসেন।


গ্রাফিক্স 

১/৩ বার্নিং ম্যান ফেস্টিভাল, নেভাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

২/বাংলা  নাটক ডৌল : জুলেখার জেরা পর্ব দৃশ্য।

৪/ ব্রেট রাটনার পরিচালিত রেড ড্রাগন সিনেমার দৃশ্য।

৫/আইরিশ ফায়ার ড্যান্স শো