ফ্রান্সে প্রকাশিত বাংলা ওয়েবজিন। প্রকাশক : প্যাট্রিসিয়া গিদাস, ভ্যান, ৫৬০০০, ব্রিটানি, ফ্রান্স। সম্পাদক : নাসরিন-জয়া হক, চয়ন খায়রুল হাবিব। Contact : choygypsy@yahoo.com

Saturday, June 5, 2021

বৈবাহিক বানরকুল এবং বিবর্তনের ডুগডুগি

।।তৃণা রাব্বানি।।লুৎফর রহমান বাবু।।


সনাতন কি?

হেটেরোনর্ম্যাটিভ ডুগডুগি বাজানো কনভেনশনাল ম্যারিডেরা মানবিক বিবর্তনে কিভাবে বাধা দেয়?
হেটেরোনর্ম্যাটিভ, আর কনভেনশনাল ম্যারিড নারী, পুরুষ কি আসলে চাইলেও লিবারাল/উদারনৈতিক, নারীবাদী, সমাজতন্ত্রী, বিপ্লবী এসব হতে পারে?এরাতো ঘুরে ফিরে যা করে তার পুরোটাই স্বামী, স্ত্রী, সন্তানের জন্য করে।স্বামী, স্ত্রী, সন্তানের বাইরে যেটুকু করে সেটাও স্বামী, স্ত্রী, সন্তানের প্রতিক্রিয়া থেকে করে।
হেটেরোনর্ম্যাটিভ নাস্তিক হলেও সনাতনেই থাকছে।দক্ষিন এশিয়ার নারীবাদ, ,সাংস্কৃতিক সঙ্কোচন, মৌলবাদের উত্থ্যান সবগুলোতেই হেটেরোনর্ম্যাটিভ আর কনভেনশনাল ম্যারিড গ্রুপের ভূমিকা আছে।আবার কলোনিয়াল সময় এবং পরে পয়েন্ট সিস্টেমে ডিয়াস্পোরাতে এই গ্রুপই অভিবাসী হয়েছে।

চিনে, দক্ষিন এশিয়াতে কমিউনিস্টদের ভেতর হেটেরোনর্ম্যাটিভ পরিবারতন্ত্রের ঝোক প্রবল।ভারতে, বাংলাদেশে মার্ক্সবাদিরা যথাক্রমে হিন্দু ও মুসলিম কট্টরবাদীদের সমর্থন করে বসে আছে।উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি কার্যত রাজতন্ত্র কায়েম করেছে।বিশ্বজুড়ে ধর্মিও প্রতিষ্ঠানগুলো হেটেরোনর্ম্যাটিভ অর্থাৎ সনাতন পারিবারিক জীবন যাপনকেই সমর্থন দিচ্ছে।ইয়োরপসহ আরো কিছু অঞ্চল হেটেরোনর্ম্যাটিভ মূল্যবোধ থেকে সরে আসায়, ধর্মসঙ্ঘ এবং তাদের কথিত মডারেট অনুসারিরা এসব অঞ্চলে সুবিধাটুকু নেয়, কিন্তু মনে বিদ্বেষ পুষে রাখে।

আমি বাংলাদেশের উইমেন চ্যাপ্টারের লেখাগুলো উল্টেপালটে দেখলাম।সুলতানা কামাল, সারা হোসেন, রাহনুমা খানমদের কাজ কর্ম পর্জালোচনা করলাম।অধিকারের কিছু জায়গাতে এরা ঠিক আছে।কিন্তু এদের পুরো প্রণোদনা আসছে হেটেরোনর্ম্যাটিভ পুরুষতন্ত্রের বিভিন্ন পক্ষালম্বন থেকে।বাংলাতে হোমোসেক্সুয়ালিটির বাংলা সমকামিতা, বাই সেক্সুয়ালিটি উভকামিতা, ট্রান্স জেন্ডার তৃতিয় লিংগ, কিন্তু সবচেয়ে বড় গ্রুপ অর্থাৎ হেটেরোনর্ম্যাটিভ বা হেটেরোসেক্সুয়াল নর্ম্যাটিভের কোনো চালু বাংলা নেই, অর্থাৎ এটা তর্কাতিত একটি অবস্থান।এর থেকে বোঝা যায় এই সমাজে বা এ জাতীয় সমাজে ঘরোয়া সহিংষতাকে কেনো গুরুত্ব দেয়া হয় না।কেনো এ ধরনের সমাজে ধর্শন বাড়তে থাকে।আবার এ ধরনের সমাজে হিন্দু তত্ব বা শারিয়া দাবি কেনো বাড়তে থাকে।মূলত যারা মডারেট ভাবেও এই তর্কাতিত হেটেরোনর্ম্যাটিভ প্রথাগুলো সাংসারিকভাবে চালু রাখে, তারা ঘুরে ফিরে কট্টরপন্থীদের পরিসর বাড়াতে থাকে।

সারা বিশ্বের হেটেরোনর্ম্যাটিভ মূল্যবোধ থেকে বাংলাদেশ বা দক্ষিন এশিয়া বিচ্ছিন্ন নয়।এই মূল্যবোধের প্রথম প্রতিরোধ আসে সেকুলার আন্দোলন এবং মেয়েদের ভোটের অধিকার থেকে।যেসব দেশে গনতন্ত্র নামে, সেখানে মেয়েদের ভোটের অধিকার থেকে কার্জত কোনো প্রতিনিধিত্ব তৈরি হয় না।সেকুলার রস্ট্রগুলো ধর্মিও অনুশাসন থেকে রাস্ট্র ব্যাবস্থাকে আলাদা করে নিতে পারলেও হেটেরোনর্ম্যাটিভ পারিবারিক কাঠামোর সাথে চড়াদাগে আপোষ করেছে, যার প্রভাব পড়েছে কল্যানবাদি রাস্ট্রগুলোর নাগরিক জীবনেও।মাত্র কয়েক দশক হলো বিশ্বের কিছু অঞ্চল পারিবারিক কাঠামোতে, আর্থিক লেনদেন, সামাজিক বিধানে হেটেরোনর্ম্যাটিভ মূল্যবোধকে পরিহার করছে।কিন্তু এতো হাজার বাছরের একটি সংস্কার আমাদের মনে চেপে আছে।যেসব সংস্কার থেকে আমরা ছেলেদের খৎনা বা সুন্নত করাই, হালাল, হারাম, খোসার করাই তা থেকে মুক্ত হওয়া এত সহজ নয়।বৌদ্ধ এসবের বিরুদ্ধে গিয়েছিল, তার অনুসারীরা যে শুধু হেটেরোনর্ম্যাটিভ জীবন ধারা ফিরিয়ে এনেছে তাই নয়, হেটেরোনর্ম্যাটিভদের সবচেয়ে নৃশংস জাতিবিদ্বেষেও পিছপা হয় নাই।

সব ধর্ম, সব তত্ব, সব ডগমার পেছনে বেশ আরামে বসে হেটেরোনর্ম্যাটিভেরা ডুগডুগি বাজিয়ে চলছে।ডুগডিগিটা তারা নবায়ন করছে নারীর প্রজণন প্রক্রিয়া ঘিরে।এই ডুগডুগিটাই কেড়ে নেয়া দরকার।

তৃণা রাব্বানি
২১/০৫/২১

মানুষের অঙ্গে বিবর্তনের সাক্ষ্য

মানুষ কিংবা যে কোনো জীবদেহ মোটেই নিখুঁত নয়, তাতে বহু খুঁত আছে। এর কারণ ‘বিবর্তন’, যে শব্দটি শুনলে কিছু মানুষ আৎকে উঠে, তাচ্ছিলে তাকায়, তফাতে সরে যায়। কিন্তু একে তো আজ আর কিছুতেই এড়ানো সম্ভব নয়। ধর্মের গোঁ ধরে বসে থাকলে শুধু পিছিয়েই যেতে হবে, তারপর একদিন দেয়ালে গিয়ে পিঠ ঠেকবে। জীবদেহ মোটেই একটা নিখুঁত ডিজাইনের নয়, বরং এরা প্রকৃতিতে বিবর্তনের ফসল, জীবন্ত সাক্ষ্য।

সময়ের দীর্ঘ পরিক্রমায় জীবদেহ অনেক এলোমেলো অন্ধ 'ট্রায়াল অ্যান্ড এরর' প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাওয়ায় বির্তনের ছাপ এখানে সুস্পষ্ট । উদাহরণস্বরূপ মনবদেহের কথাই ধরা যাক, মানবদেহে অজস্র নিষ্ক্রিয় অঙ্গের (vestigial organ) অস্তিত্ব আছে, যেগুলো একসময় আমাদের পূর্বপুরুষদের কাজে লাগলেও এখন আর লাগে না, যেমনঃ পুরুষদেরর স্তনবৃন্ত, পুরুষদের ইউটেরাস, আঁক্কেল দাঁত, এপেনডিক্স, পুচ্ছ অস্থি (Coccyx যা হারানো লেজের অবশিষ্টাংশ), কান নাড়ানোর পেশী, চোখের নিক্টিটেটিং ঝিল্লি, ইত্যাদি। এগুলো ছাড়াও মানব দেহে বহু বিলুপ্তপ্রায় অঙ্গের অস্তিত্ব রয়েছে। অন্যদিকে, মানুষের মধ্যে কিছু ভেসটিজিয়াল ব্যবহার এবং প্রতিবর্তী ক্রিয়া (reflex) রয়েছে, যেমনঃ শীতে বা ভয়ে আমাদের শরীর কাঁটা দিয়ে ওঠার ফলে আমাদের দেহের লোম খাড়া হয়ে যায় এবং লোমকূপ ফুলে ওঠে, হিক্কা তোলা, ইত্যাদি। বলা যায়, বিবর্তনের সাক্ষ্য মানুষের অঙ্গে ও বিভিন্ন রিফ্লেক্সে।

লুৎফর রহমান বাবু
২/০৬/২১

কভার ফটো : প্ল্যানেট অফ দা এইপস সিনেমার দৃশ্য।