।।অমিতাভ পাল।। নাসরিন জয়া হক।।তৃণা রাব্বানি।।
এরোপ্লেন এবং মনের ছবির সিনেমা
ছোটগল্পকে আমার মনে হয় কবিতার চেয়ে একটু মোটা এক চরিত্র। আয়তনের কারণে একটু বেশি জায়গা নেয় সে, একটু বেশি খায়, তার জামাকাপড় বানাতেও একটু বেশি কাপড় লাগে। কিন্তু একই ভাষায় কথা বলে তারা দুজনেই, একই বাচনভঙ্গি, একই এক্সপ্রেশন। ছোটগল্প আর কবিতাকে দুই ভাইও বলা যায়, একজন হয়তো ক্যাডেট কলেজে পড়ে, আরেকজন পাড়ার স্কুলে। একই অনুপরমাণু দিয়ে তৈরি জগতের সামনে তারা দাঁড়ায়, একই আকাশের তলে। কেবল অনুপরমাণুর বিচিত্র আকৃতি গঠনের যে অদ্ভূত ক্ষমতা, সেই ক্ষমতায় তৈরি বিভিন্ন জগতের ছবি আঁকে তারা।
কবিতা রেখাচিত্রের ভিতর দিয়ে বুঝিয়ে দেয়, কি এঁকেছে সে। এদিক দিয়ে ছোটগল্প এতটা কৃপণ না বরং যা সে আঁকতে চায়, তার স্পষ্ট একটা ছবি থাকে তার চিত্রকর্মটিতে। তবে এখানেও এক ধরনের সংক্ষিপ্ততা তাড়াহুড়া করায় শিল্পীকে। এই তাড়াহুড়া সব বাহুল্যকে এড়িয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর তাগিদ। ছোটগল্প ঘোড়ার মতো দৌড়ায়। তার খুড় তার গমনপথের প্রত্যেকটা বিন্দুকে স্পর্শ করে না ঠিকই কিন্তু লাফিয়ে লাফিয়ে এগোলেও ছোটগল্প একটা খুড়ের দাগে ভরা পথ তৈরি করে, অনুসরণযোগ্য একটা পথ। অন্যদিকে কবিতার কোন পথরেখা থাকেনা, সে উড্ডীন। এরোপ্লেন উড়ে যাওয়ার দাগ যেমন থাকেনা আকাশের পিঠে, কবিতাও তেমনি দাগহীন এক উড্ডয়ন। এরোপ্লেন উড়ে যাওয়ার পরে থেকে যাওয়া শব্দের রেশের মতোই রেশ রেখে যায় কবিতা। এটাই তার গতিপথের উপস্থিতির একমাত্র চিহ্ন।
কবিতার এই উড্ডয়ন যুক্তির ধারাবাহিকতাকেও অগ্রাহ্য করে। এরোপ্লেন যেমন অগ্রাহ্য করে নিচের অনেক গ্রাম ও শহরকে, উড়ে যায় আরো দূর কোন গন্তব্যে- যেখানে তার নামার কথা, কবিতাও তার গন্তব্যকে ছুঁতে পেরিয়ে যায় অনেক ডিটেইল। ফলে উল্লম্ফন তার সহজাত। তাই বলে মাটিতে পা না রাখাটা কিন্তু তার স্বভাব না। পা দিয়ে পিছনে ধাক্কা না দিলে যেমন সামনে যাওয়া যায় না, কবিতাও সেইরকম ধাক্কা দিয়েই এগোয়। কিন্তু ধাক্কাটা খুব জোরে দেয়ার কারণে তার লাফটাও হয় আকাশছোঁয়া। আর আমরা তাকে ধরাছোঁয়ার বাইরের কোন বিষয় বলে ভাবি। অথচ আকাশ দিয়ে উড়ে যাওয়া এরোপ্লেনের ভিতরে মানুষজন থাকে, তাদের কথাবার্তা থাকে, ঘুম-পিপাসা-রেচনসহ জীবনের সবরকমের কাজই তারা করে সেখানে এক অন্তর্লীন জগতে লুপ্ত থেকে। কবিতাও এরকমই- এখানেও জীবন জীবনের মতোই।
আর ছোটগল্প জীবনকে এক অশ্বারোহীর মতো দেখে। ঘটনার ঝোঁপঝাড়, মাটি, মানুষ, খাল, নদী পেরিয়ে যাওয়া এই যাত্রীর মনোসমীক্ষণই সে ধারণ করে তার নিজের ক্যামেরায়, সম্পাদনা করে এবং সাদা পর্দায় ছড়িয়ে দেয় তার প্রতিবিম্ব। ছোটগল্প মনের ছবির সিনেমা বানায়।
।।অমিতাভ পাল।।
৯/০৫/২১
ঢাকা, বাংলাদেশ
- Trina Rabbaniদাবার বোর্ডে নাচ, নাচের মঞ্চে দাবা চলতে পারে, যারা করছে তারা দুটোর সঙ্গা, প্রয়োগে ভালো হলে।আমার লেখায় তা করতে চাই।পারি কি না জানি না।অধ্যাপনা নিয়ে অনেকের রিজার্ভেশান আছে।আমি এটাকে দেখি দেয়া নেয়া নিয়ে।সাহিত্য করছি, কারো থেকে নিচ্ছি না তা হতে পারে না।এটা আকাশ থেকে পড়ে না।রবীন্দ্রনাথ গেটে, দান্তে, সুইন বার্ন, কালিদাশ, বলরাম হাড়ি থেকে নিয়েছে, তাদের নিয়ে লিখেছেন সুনীতি কুমারদের নিয়েও তার আপত্তি ছিল না।জীবনানন্দকে পশ্চিমে পরিচয় করিয়ে দেয়া বুথ সিলি অধ্যাপক, রবীন্দ্রনাথের নবায়ন করা রাদিচেও অধ্যাপক।ইয়েটস, এলিওট, বুদ্ধদেব বসু, সোয়িঙ্কা অধ্যাপনা করেছে।বেনজামিন জেফনায়া যার আনুষ্ঠানিক ডিগ্রি নেই, সেও অক্সফোর্ডে আমাদের ক্লাস নিয়েছে।আমার আগে কেউ নেই,, পরের সবাই আমাকে পড়বে, সেটা সাহিত্য না হয়ে নবুয়ত।অমুকটা তুমুকটার মতো, ব্যাং আর অন্য মাছেরা এক জিনিস, এসবে কোনটার অবয়ব, আকৃতি, সংজ্ঞা নিরুপনের দায় থাকে না।বিক্রম শেঠ যখন সনেটে উপন্যাস লেখেন, তখন বলেন যে এটা সনেটে লেখা, বলেন না যে এটা ব্ল্যাঙ্ক ভার্সে লেখা।দাবার বোর্ডে নাচের চাল সবচেয়ে বেশি পাই আমি চয়ন খায়রুল হাবিবের লেখাতে, কিন্তু উনি দেয়ানেয়ার রেফারেন্স দেন।রেফারেন্স আমাদের ভুল বা সঠিক হতে পারে।রেফারেন্স থাকবে না, পিয়ার্স রিভিউ হবে না, এটা এখনকার চল হতে পারে, কিন্তু তার স্ক্যাফল্ডিং এর দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে।আমি সরাসরি বলতে চাচ্ছি, প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে চিন্তার চালাচালি করে, কিন্তু চিন্তাসূত্রটি লেখা হচ্ছে না।আমার পাঠে বর্তমান লেখাটির দুর্বলতা এখানে।শুরুতেই সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে, কিন্তু সে সিদ্ধান্তের সমর্থক রেফারেন্স নেই।যেহেতু সাহিত্য সবসময় নবায়িত রস, সেহেতু এধরনের সিদ্ধান্তের সমর্থক রেফারেন্স যে নেই তা নয়।তার দায়টুকু আমাদের নিতে হবে।
।।অমিতাভ পাল।।নাসরিন-জয়া হক।।তৃণা রাব্বানি।।
ফেসবুক জুলেখা সিরাপ গ্রুপ থেকে সংগ্রহ।
Cover artwork by Gulam Muhammad Sheikh