।।মুন্নী ইয়াসমিন।।
আকাশ ও শঙ্খচিল
নির্বোধ শূন্যতা কষ্টের দিগন্তে হাসে
নিজস্ব নিয়মে,
যেন পানকৌড়ি মুখ তোলে আর ডুবে যায় জলে।মিটিমিটি হাসে জল, চারপাশে ছিটেফোঁটা তার মাতন
হঠাৎ মুখ তুলে চকিত চাহনি
অপার মুগ্ধতা, ভোলা যায় না!
মাস- বছরের কাঁটা ঘুরে যায়
তেপান্তরের মাঠে,
ধূলো ওড়ে জ্যেষ্ঠের তরুণ বুকে
কতো কালের অদেখা তেষ্টা!
হা হা করে ধেয়ে আসে তপ্ত সমীর
পানকৌড়ি উড়ে যায়,
সুখ সারির গানে হিমের নোলক দোলে
কতো কালের নিদারুণ খ্রাপে;
বিস্তৃত জলাশয়,
চোরা কাঁটা বিঁধে রয়,
ডাহুক ডাকা ভোরে
স্বপ্নের আকাশে শঙ্খচিল ওড়ে।
অশান্ত নগরী
মনে পড়ে যায়
বৈশাখের আকাশ,
নির্ঘুম মেঘেরা হেঁটে বেড়ায়
কী নিশ্চিন্তে
যেমন অবিরত পায়চারি
বোহেমিয়ান সুখতারা
নির্বান্ধব এই হাওয়ার মাতামাতি
কী ভীষণ একাকী
নিঃসঙ্গ হৃদয় বলে,
অন্যরকম, যদি আরও কিছু হতো!
আফসোসের পৃষ্ঠা উল্টিয়ে নিয়ে
ফের দেখো,
কী মহৎ মৃত্যু!
ভালোবাসা এখন খেলা করে
নির্জলা সুরার চুমুকে,
বলে দাও শুভ রাত
মধ্যরাতে সারমেয় ডেকে বলে
অশান্ত নগরী ঘুমিয়ে পড়ো।।
অন্ত্যমিল
একদিন কষ্টের পাহাড় আকাশ ছুঁয়ে যাবে
আমি আর স্বপ্ন দেখবো না
একদিন মিথ্যের বিন্দু বিন্দু শিশির সাগরে মিশে যাবে
আমি আর অপেক্ষা করবো না
একদিন ভালোবাসার সুবাসিত জোছনা প্রিয় পুরুষের ঠোঁটে হাসবে
আমি তখন আর লিখবো না
একদিন অসংখ্য ভুলের দিগন্ত পেরিয়ে
তুমি ফিরে আসবে
সেদিন আমি আর ফিরবো না।।
ডুবসাঁতার
মহাকালের গহীন সেই নীলে
যদি সে হারায় কোনদিন ভুলে,
বেদনার কালচে পরশে
মেখে নেবো ভালোবাসার আবেশে;
হারিয়ে যে যায়, নির্ঘুম উদাসে
নিয়তির হাত ধরে, অসীম দুঃসাহসে।।
দ্বিধাহীন আমি
কী করে জানলে
আমি মিশে আছি
শুধু তোমার
চোখের কাজলে?
শ্রাবণ রাতের সিক্ত ধারায়
ত্রস্তপায়ে হেঁটে গেছি
ঝড়ো হাওয়ায়,
ছুঁয়েছিলো তোমায়।
চিনতে পারোনি
চিকন চাহনি!!
বারবার ফিরে আসি
নিরুপদ্রবে ভালোবাসি।
কেউ জানেনি
বহুদিন কেটেছিল
বহুরাত জেগেছিল
নিঝুম ছায়ায়।
পাতার কানাকানি
দ্বিধাহীন আমি
তোমার পানে
শুধু চেয়ে থাকি।।
মানবিক হিসেব
অনুভবের শিকড়
এলেবেলে স্বপ্নের মতোই
চলছে যেন এক
দীর্ঘ পথচলা।
কখনো বাসা বাঁধে পর্বতশৃঙ্গে
যেন চৈত্রের এক আগুন বোনা দুপুরে,
হেঁটে বেড়ায় যুক্তির ম্লান বসন্তে
পটলচেরা হাসি পড়ে থুবড়ে
পরম করুণার জলে।
সবকিছু নিয়ে আছি আমি
নিয়মের ঝিকির সারাবেলা
সময়ের হিসেব চলে
মাস, বছর আর নিত্য অবহেলা।।
।।মুন্নী ইয়াসমিন।।
কভার পেইন্টিং : মকবুল ফিদা হোসেইন