।।লুবনা ইয়াসমিন।।
আসলে কি মেহের আফরোজ শাওন, মোসারাত জাহান মুনিয়া, আমিনা তাইয়েবাদের জীবনে কোনো পার্থক্য আছে?কিম্বা লেখক হুমায়ুন আহমেদ, বিপুল বিত্তের অধিকারী সায়েম সোবহান আনভীর, ধর্ম ব্যাবসায়ী মামুনুল হকদের গুনগত পার্থক্য আছে কি না?
হুমায়ুন, সায়েম, মামুনুল ভিন্ন পথে ক্ষমতাবান হয়েছেন এবং সে ক্ষমতার প্রতাপ তাদেরকে কিশোরীদের ঘনিষ্ঠ হতে সহায়তা করেছে।কিশোরীরাও এই ক্ষমতার প্রতাপের প্রতি প্রলুব্ধ হতে হয়, পাওয়ার করিডোরের সোপানে পা রাখতে হয় এসব মূল্যবোধে বড় হতে হতে আর প্রকৃত বড়টুকু হতে পারছে না, অন্য একটা বড়র ছায়ায় বিলিন হয়ে যাচ্ছে, আত্মঘাতি হচ্ছে, বোরখা পরছে, আর বেচে থাকলে জ, ই মামুনদের মতো সরকারের পোষা ময়নাদের সাথে মিলে ছিচকে সব ঝগড়াঝাটি করছে।অথচ এই একই দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত গার্মেন্টস শিল্পে কঠোর পরিশ্রম করছে লাখ লাখ নারী।এই একই দেশে পর পর প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন নারী।এই একই দেশের সংসদের স্পিকার নারী।
হুমায়ুন যে ফিল্ম স্টুডিও গড়েছেন, আনভির যে রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্যের মালিক, মামুনুল যে ক্ষ্মতার শেয়ার চান তার মূলে আছে নারীদের শ্রম।অথচ এরা এদের জায়গা থেকে নারীত্বের অবমূল্যায়ন করেন।এদের কাউকে সম্পর্ক করতে কেউ মানা করছে না, এদের কাউকে সেক্স করতেও কেউ মানা করছে না।এদের যা ক্ষ্মতা এদের সমবয়সীরাও এদের সাথে সম্পর্ক করতে চাইবে, তা এদের কাছাকাছি হওয়া সমবয়সী নারীদের আহাউহুতে খুব বোঝা যায়।কিন্তু কিশোরিরা তাদের কয়েক গুণ বেশী বয়সী ক্ষ্মতাধর পুরুষদের প্রতি আকর্ষিত হচ্ছে কেনো?এই কিশোরীরা বড় হয়েছে সেই সমাজে, যেখানে বিয়ের বাজারে ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্টার, পুলিশ, সেনা কর্তাদের চাহিদার পেছনে রয়েছে তাদের গ্রহনযোগ্য সামাজিক দুর্নিতি।
আমাদের কিশোরীরা শেখ হাসিনাকেও দেখতে পাচ্ছে না, রুবানা হককেও দেখতে পাচ্ছে না।দেখতে পাচ্ছে পচনশীল ডাক্টার, ইঞ্জিনিয়ার, পুলিশ কর্তাদের।এদেরকে এশপের নৈতিকতা শেখাচ্ছে নৈতিকতাকে পায়ে মাড়ানো পুলিশের কর্তা বেনজির আহমেদ। গনস্বাস্থ্য ব্যানার ঝুলিয়ে এদেরকে প্রাইভেট স্বাস্থ্যের বুলি গেলাচ্ছে জাফরুল্লাহ চৌধুরী।আইনের শাষন প্রতিষ্ঠিত হলেও সেবাখাতের সামাজিক প্রটোকলিও আবদার বন্ধ হবে না, কারণ এদেরকে প্রশ্রয় দিয়ে নষ্ট করা হয়েছে।আর নষ্টটা খেতে খেতে কোনো কোনো কিশোরী ভাবছে, সবাই খাচ্ছে, আমি কেনো খাবো না, বোরখা পরেও খাচ্ছে, বোরখা ছেড়েও খাচ্ছে।সবাই না।কেউ কেউ খেতে না চাইলে ধর্শিত হচ্ছে।আর সব মিলিয়ে কিশোর, কিশোরীদের পারস্পরিক সহাজাত রোমান্সে তৈরি করা হয়েছে একের পর এক অবদমন আর নিশেধাজ্ঞা।
সোহাগী জাহান তনু মাথার চুল পুরোই ঢেকে রাখতো, এখানে ওখানে গান গাইতো, আর প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের খরচ চালাতো।তনুদের যখন ক্যানটনমেন্টের ভেতর হত্যা করে বিচার হয় না, তখন তনুর বয়সী শাওন, মুনিয়ারা অবচেতনে ঠিক করে নেয় যে নিরাপদ থাকতে হলে হুমায়ুন, আনভির, মামুনুলদের সাথে থাকতে হয়।সাগর-রুনি হত্যার যখন বিচার হয় না, তখন বাদবাকি সাংবাদিকেরা ভাবতে থাকে কর্তার ইচ্ছায় খবর পরিবেশনই উত্তম পন্থা।
জেমকন গ্রুপের ট্রিবিউন পত্রিকাগুলো আদাজল খেয়ে কেনো মুনিয়া আত্মহত্যা নিয়ে খবর দিচ্ছে, আমার কাছে তার ব্যাখ্যা হলো, জেমকন আয়োজিত বুদ্ধিজীবি কেনার হাট ঢাকা লিট ফেস্ট নিয়ে বসুন্ধরা এবং তাদের মালিকানাধীন কালের কন্ঠ তেমন গা করে না।কালের কন্ঠের সম্পাদক, উপন্যাসিক ইমদাদুল হক মিলনকে ডাকলে একটু গা করে।ট্রিবিউনের সাংবাদিকেরা চলে জেমকনের বেতনে, জেমকনের বিজ্ঞাপনে, অন্যদের বিজ্ঞাপন না হলেও চলে, তবে পুরোপুরি চলে না, ট্রিবিউনের কলেবরও কাটছাট করা হয়েছে।
আবার অন্য অফলাইন, অনলাইন কথিত গনমাধ্যম, সরকার মুনিয়া ঘটনা নিয়ে তেমন বলবে না, কারন বসুন্ধরার বিপুল সাম্রাজ্য থেকে ছিটেফোটা পাওয়াটাও তাদের ছেলেমেয়েদের আখেরের জন্য ভালো।আর এখানে খোদ এমডির ইমেজের ব্যাপার, ব্র্যান্ডের ইমেজের ব্যাপার।সবাই জানে এই ছিটেফোটা ফুলেফেপে কোথায় যাবে।২০০৬ সালের ৪ জুলাই গুলশানের একটি বাড়িতে খুন হন বসুন্ধরা টেলিকমিউনিকেসন্সের পরিচালক হুমায়ুন কবির সাব্বির। ওই ঘটনায় করা মামলায় ২০০৮ সালের ১২ মে পাঁচজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। আসামিদের ভেতর ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান (সানবীর), ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ পাঁচ আসামিকে খালাস দিয়ে রায় দেন। ওই রায় বাতিলে সম্প্রতি আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।খালাসের রায় কেন বাতিল হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট ২০১৬ সালে।
মনে হতে পারে আহা, আমাদের রাস্ট্রপক্ষ কত ভালো, আমাদের হাইকোর্ট কত ভালো।আসলে স্পেশাল ট্রাইবুনাল সানবীরকে যে খালাস দিয়েছে, তারই উচ্চতর প্রাতিষ্ঠানিক খেলা এগুলো।মামলা ট্রাইবুনালে আসার আগে তখনকার স্বরাস্ট্রমন্ত্রি লুতফুজ্জামান বাবর, রাজকুমার তারেক রহমান, পুলিশের উচ্চতর গুণধরেরা আক্ষরিকভাবে না কি শত কোটি টাকা নিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে।দুদকও খেয়েছে, খাচ্ছে।মুনিয়া আত্মহত্যাতেও বিভিন্ন পক্ষ্য যে তাদের জালগুলোকে খুলে মেলে ধরছে, ধরবে তা লেখা বাহুল্য।
মুনিয়া, তনু এরা বিভিন্ন মাপের কাদম্বরী।মেহের আফরোজ শাওনের কাদম্বরী হবার দরকার নেই।ওনার যে পরিমান বিত্ত তা দিয়ে উনি কিশোরিদের এম্পাওয়ারমেন্টের কাজ করতে পারেন, যাতে তাদের কাদম্বরী না হতে হয়।ট্রান্সকম গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যানের ১৫ বছরের মেয়ে শাজনিনকে ধর্শন করে হত্যা করা হয়েছিল, যার বিচার পেতে এই বিপুল ক্ষ্মতাধর কর্পোরেট সংস্থার দেড় যুগের বেশী অপেক্ষা করতে হয়েছিল।ট্রান্সকম গ্রুপও এই প্রকল্পে এগিয়ে আসতে পারে।আনভিরের কাছেও কেনো আমরা এই দাবি পৌছে দিচ্ছি না, তিনিও একটি তরুন সংসার শুরু করেছেন।মুনিয়া, তনু, শাজনিনদের প্রাণ আমরা ফিরিয়ে আনতে পারবো না।কিন্তু আরো এরকম ঘটনা যাতে না ঘটে বা এটা একটা প্যাটার্নে দাঁড়িয়ে না যায়, তার লক্ষ্যে আমরা কাজ করতে হবে।ডিনায়াল বাদ দিয়ে আমাদের এখন স্বিকার করার সময় এসেছে হুমায়ুন আহমেদ, সায়েম সোবহান আনভির, মামুনুল হক একই সামাজিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ফসল।
।।লুবনা ইয়াসমিন।
১/০৫/২১
Photos :
1)Late writer Humayun Ahmed and Meher Afroze Shaon on their wedding.
2)Mosarat Jahan Munia and Sayem Sobhan Anvir
3)Maolana Mamunul Haq and his claimed second wife in a resort.
- 1 reply
- তরঙ্গ সম্পাদকীয় : লুবনা ইয়াসমিনের এ-লেখাটি ফেসবুক জুলেখা সিরাপ গ্রুপে প্রকাশিত হয় ১/০৫/২১এ মে দিবস ও মেয়ে দিবস শিরোনামে।লেখা, কভার ছবি ও মন্তব্যগুলো সেখান থেকে নেয়া হয়েছে।