।।তারিরো এমজেজেওয়া।।অ্যালবার্ট অশোক।।অর্পিতা কবির।।
![]() |
অমৃতা শের-গিল |
অনেক সময় একজন শিল্পী, লেখককে নিয়ে ব্যাপক আলোচনার পর দেখা যায় যে আলোচক আলোচিতের মূল জায়গাটি হয় ধরতে পারে নাই, নয় এড়িয়ে গেছে। স্থানীয় সামাজিক শর্ত আত্ম-সেন্সর হয়ে বাধা হয়ে দাড়ায়। অমৃতা শের-গিলের মতো শিল্পী যে কি না সামাজিক শর্তগুলোর মানসিক, দৈহিক সীমা গুড়িয়ে দিয়ে ক্যানভাসে জায়গা করে দিয়েছে অব্যক্ত, অভূতপূর্ব নারী দেহকে, তার ক্ষেত্রে যে উপমহাদেশীয় অধ্যাপকেরা শর্তসাপেক্ষ থেকেছে তা লেখা বাহুল্য।
আমাদের মূল প্রশ্ন, অমৃতার মূল অনুষঙ্গ কি ছিলো?
অমৃতার ছবিগুলোতে ঘুরে ফিতে অমৃতা নিজেকে দেখাতে চাইছে, নিজের আশেপাশের নারীদের দেখাতে চাইছে, তাদের দেহ
বল্লরি তুলে ধরতে চাইছে, মেঠো সাধারণ মানুষদের আঁকছে।দেহ এবং যৌনতা বাদ দিয়ে অমৃতার আলোচনা তার কাজ থেকে রক্ত, মাংস, অস্থি, মজ্জা সরিয়ে ফেলার মতো। আবার তার বড় হবার পুর্নাংগ ইতিহাস চমকপ্রদ হলেও তা তার কাজের চেয়ে বড় করে ফেললে অমৃতার অর্গানিক স্বনির্মিতকেও প্লাস্টিক সার্জারির ছাঁচে হয় ছেঁটে ফেলা হয় নয় ফুলিয়ে বেঢপ করে ফেলা হয়।নিউ ইয়র্ক টাইমস তাদের নাতিদীর্ঘ একটি নিবন্ধে আমাদের কাছে অমৃতাকে নিয়ে এলো রক্ত, মাংস, হাড়, মজ্জার তিন মাত্রিক জ্যান্ত যৌনতায়। অ্যাালবার্ট অশোক ও অর্পিতা কবিরের অনুবাদে তা পড়া যাক :
![]() |
আত্মপ্রতিকৃতি, ১৯৩১ |
১৮৫১ সাল থেকে কোন বড় মনিষী বা বিখ্যাত ব্যক্তি মারা গেলে The New York Times-এ 'Overlooked' বলে একটা প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এতদিন সেখানে সাদা সাহেবরাই স্থান পেত। গত বছর,(জুন,২০১৮) সেখানে ভারতীয় মহিলা শিল্পী অমৃতা শের-গিলকে প্রকাশ করা হয়। ভারতীয় নারীকে আমেরিকার বড় খবর মাধ্যমে প্রকাশ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এতটাই তাৎপর্যপূর্ণ ভারতীয়রা এখনও সেই ভাবে অমৃতাকে দেখেনা। কারণ কি ভারতীয়দের সচেতনতা কম? অজ্ঞ? বিস্মিত হতে হয়।
তাকে বলা হয় ইন্ডিয়ার ফ্রিডা কাহলো।ইউনেস্কো, ইউনাইটেড নেশনের সাংস্কৃতিক সংগঠন, অমৃতা শের-গিলকে সম্মান জানিয়ে তার জন্মের ১০০ বছর পুর্তিতে, ২০১৩ সালে ঘোষণা করে the international year of Amrita Sher-Gil. এগুলি খুব বিরল সম্মান।
![]() |
বায়ে ছোট বোন ইন্দিরার সাথে অমৃতা |
বহু মানুষ বুঝেননা, ছবি কি? কিন্তু তাদের যদি এই কথা বলা হয় তারা অপমানিত বোধ করেন। তাদের ধারণা, ছবি এঁকেছে শিল্পী দেখতে পাচ্ছি, এ আবার বোঝাবুঝির কি আছে? ছবি যদি বোঝাবুঝির না হত, তাহলে কোনও ছবির স্থান মিউজিয়ামে আর কোনও ছবির স্থান সাধারণের ঘরের দেওয়ালে হত না। তাছাড়া আর্থিক মূল্যও লাখ লাখ, কোটি কোটি হত না। শিল্পী তো লাখ লাখ আছে। কিন্তু দু-একজনের ছবিই বিখ্যাত হয়।
অমৃতার ছবিতে তার জীবনের উপলব্ধি, সময়, স্থান কাল পাত্রপাত্রী আছে। যা এক শিল্পীজীবনের চরম বিষয়। পটুয়াদের মতো মূর্তি গড়া বা দেওয়ালের ক্যালেন্ডার নয়। অমৃতা ভারতের অগ্রদূত শিল্পী। ১৯৩০ সাল নাগাদ, মহিলাদের প্রতিদিনের জনজীবন ছিল তাঁর ছবির বিষয়। সেখানে তার তুলি রং মহিলাদের জীবনে একাকীত্ব ও নিরাশার বা হতাশার ছবি প্রকাশ করে গেছেন। তিনি মহিলাদের বাজারে যাওয়া, বিয়েবাড়িতে, ঘরে, কখনও মহিলা অন্য মহিলার সঙ্গে একাত্মবোধের ছবি, তাঁদের মন মেজাজ খুশি এসব তিনি এঁকে গেছেন যা সেই সময়ে অন্য কারুর ছবিতে দেখা যায়নি।
![]() |
তিন রমনী, ১৯৩৫ |
![]() |
বাবা মায়ের সাথে শিশু অমৃতা ও বোন ইন্দিরা |
১৯৩৩ সালে তার ১৯৩২ সালের একটি আঁকা “Young Girls” গোল্ড মেডাল পায় প্যারিস সালোনে।ছবিটাতে অমৃতা তার বোনকে এঁকেছিল। পরনে ইউরোপিয়ান ড্রেস। মুখে আত্মপ্রত্যয়ের ভাব।পল গ্যঁগার (French post-Impressionist Paul Gauguin) অনেক প্রভাব অমৃতার ছবিতে আছে যেমন “Self Portrait as Tahitian” তার limitless libido was part of the same life-force that animated her paintings। ২০০৭ সালে তার একটা ছবি Tate Modern, London প্রদর্শনী থেকে $1.6 million ষোল লাখ ডলারে বিক্রি হয়।
*অমৃতার সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক অনেক নারী পুরুষের সঙ্গে ছিল, যেমন শিল্পী ম্যারি লুইস চাসানি ও কয়েকজন শিল্প সমালোচকের নাম বার বার এসেছে।এমনকি তার ভাইপো শিল্পী ভিবান সুন্দরমের সঙ্গেও। যৌনতার প্রতিমূর্তি হিসাবে তিনি নিজেকে প্রকাশ করতেন। প্রেম প্রণয় ছিল তার জীবনের উৎস। তার পুরুষ বন্ধুও অনেক ছিল। নিউ ইয়র্ক টাইমসের ফিচারে বলা হয়েছে, অমৃতার অনেক প্রেমিক ছিল, যাদের ভেতর সম্ভবত প্রধান মন্ত্রী নেহেরুও ছিলেন।একজন সমকালীন তার ডাইরিতে লিখেছেন, কখনো কখনো অমৃতা একদিনে সাত জন প্রণয়ীর সাথে মিলিত হতো, দু ঘন্টার বিরতি দিয়ে।ব্রিটিশ সাংবাদিক ম্যালকম মাগারিজ অমৃতার সাথে এক সপ্তাহ সময় কাটানোর পর লেখেন যে তার অবস্থা হয়েছিল মোচড়ানো কম্বলের মতো, তিনি সামাল দিতে পারেন নাই।অন্যদের এসব লেখার সত্যমিথ্যা যাচাই না করা গেলেও বোঝা যায় যে অমৃতার উচ্ছাস আশেপাশের সবাইকে সংক্রমিত করতো।
![]() |
ঘুম, ১৯৩২ |
তাঁর এক মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে গর্ভবতী হয়ে পড়েন। পরে তার সঙ্গে বিয়ে হয়। নাম Victor Egan, ১৯৩৮ সালে। তার সেই গর্ভ ফেলে দেওয়া হয়। ১৯৩৯ সালে গোরখপুর জেলার সারায়া গ্রামে কিছু দিন বিবাহিত জীবন কাটিয়ে লাহোর চলে যান স্বামী স্ত্রী। লাহোর তখন অবিভক্ত ভারতের উজ্জ্বল শহর। সেখানে ১৯৪১ সালে তার একক ছবির প্রদর্শনীর আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর দ্বিতীয় গর্ভপাতের সময় স্বামীর হাতেই মারা যান। হয়ত গর্ভপাতের সময় dysentery or peritonitis হয়ে থাকবে। Sher-Gil died on Dec. 5, 1941. ২৮ বছর মাত্র বয়েস তার তখন। The cause was believed to be complications from a second, failed abortion performed by Eganl.
এই ২৮ বছর জীবনে, তিনি প্রচুর ছবি এঁকে যান ও ভারতকে এক আধুনিক ভারতে জন্ম দেন। তিনি নিজে তার ছবি সম্পর্কে এত দৃড় বিশ্বাসী ছিলেন, তিনি বলেন, ‘Europe belongs to Picasso, Matisse and Braque and many others. India belongs only to me.”
আজকের দিনে ছবি ভাস্কর্যের ছাত্রছাত্রীদের তাঁর জীবন ও ছবিকে জানা আবশ্যিক। অমৃতা শেরগিলের সবচেয়ে বড় অবদান, মুগল মিনিয়েচারের যুগ ভেঙে, তিনি পশ্চিমী শিল্পকে ভারতীয় সংস্কৃতিতে সার্থক মিশ্রণ করে যান।
অ্যাালবার্ট অশোক/অর্পিতা কবির : অনুবাদের মূল সুত্র, ২০শে জুন, ২০১৮ নিউ ইওর্ক টাইমসে লেখা তারিরো এমজেজেওয়ার নিবন্ধ।
![]() |
অবকাশে অমৃতা |