ফ্রান্সে প্রকাশিত বাংলা ওয়েবজিন। প্রকাশক : প্যাট্রিসিয়া গিদাস, ভ্যান, ৫৬০০০, ব্রিটানি, ফ্রান্স। সম্পাদক : নাসরিন-জয়া হক, চয়ন খায়রুল হাবিব। Contact : choygypsy@yahoo.com

Thursday, February 11, 2021

ফিরে দ্যাখা : শিবরাম চক্রবর্তী ও মাহমুদুল হক

।।বেলাল চৌধুরী।।

দুর্লভ ভিডিও ক্লিপে ইলাস্ট্রেটর শৈল চক্রবর্তীর সাথে শিবরাম চক্রবর্তীর আলাপ।


নিচে
বেলাল চৌধুরীর সাথে ম্যানচেস্টারে চয়ন খায়রুল হাবিবের প্রমান্য কথপোকথন, যেখানে ষাট ও সত্তর দশকের কোলকাতা ও ঢাকার লেখকদের যাপন উঠে এসেছে, সেখান থেকে শিবরাম চক্রবর্তি ও মাহমুদুল হকের অংশটুকু নেয়া হয়েছে।তরঙ্গ

শিবরাম চক্রবর্তী  

''চিঠি প্রসঙ্গে বলি।তিন জনকে জানি যারা প্রত্যেকের প্রত্যেকটি চিঠির উত্তর দিতেন।রবীন্দ্রনাথ, শিবরাম চক্রবর্তী আর সুনীল গাঙ্গুলি।সুনীলদার একটা ঘরভর্তি হাজার হাজার চিঠি।প্রশ্ন করতে বলেছিল: দেখ ভালবেসে এতজন এত চিঠি লেখে।

শিবরাম চক্রবর্তী ছিলেন রাজ পরিবারের ছেলে।কোলকাতায় উনি নানা রকমভাবে থাকতেন, ভবঘুরের মত।ওর একটা আত্মজীবনী আছে “ঈশ্বর, প্রীতি , ভালবাসা”।পড়লে তুমি বাংলা সাহিত্যের অনেক মজার মজার তথ্য পাবে।উনি সিরিয়াস প্রবন্ধ লিখতেন, কবিতা লিখতেন, শিবরামিও যে পান, ঐ যে “মস্কো বনাম পন্ডিচেরি” ওটাতো একদিনে তৈরি হয়নি, সময় লেগেছে।

ওনার বাড়ি যখন প্রথম গেছি, আমার মনে আছে সেটা হচ্ছে ঠনঠনে কালীবাড়ির পাশে, মুক্তারামবাবু স্ট্রিট।ওনার ঘরটা হচ্ছে এক মেসবাড়িতে।তার দোতালাতে উনি থাকতেন।ঘরের দরজায় একটা বিরাট তালা।আর ঘরে ঢুকলে সারা ঘরময় অজস্র রাংতা, ওষুধের মোড়ক খোলা রাংতা, আর চিঠি, পোস্ট কার্ড , এটা সেটা , আর হাজার হাজার চিঠি।

উনি দুটো কাজ করতেন; আনন্দ বাজারে একটা কলাম লিখতেন; দেশেও লিখতেন এক সময় ‘ট্রামে বাসে’; আনন্দ বাজারে লিখতেন ‘অল্প বিস্তর”।সেখানে আমিও লিখতাম, আমার সম্পর্কেও ওখানে মন্তব্য আছে।আনন্দ বাজার থেকে ফিরতেন চিঠির তাড়া নিয়ে, সেগুলোর ছোট ছোট উত্তর লিখতেন আর তা ছাপা হত প্রত্যেক বুধবারে।আমার খুব মজা লাগত যে এই লোকটা এত কিছুর মধ্যেও চিঠির উত্তর লিখে যাচ্ছে!

উনি প্রথমে ঘরে ঢুকে চৌকোনা ব্র্যাকেটের মধ্যে শার্ট বা পাঞ্জাবি ঝুলিয়ে রাখতেন।পরতেনও খুব দামি সিল্কের বা টুইলের শার্ট।বাইরে যাবার সময় তালাতে রাখা কাগজে লিখে রাখতেন, “ শিবরাম- ফুচকা খেতে পাঁচ মিনিট”, “ আলু কাবলি খেতে পাঁচ মিনিট”; আর কাচের বয়ম ছিল, বয়মে লেখা থাকত “ডালমুট” , “ মাখম” !মাখম লিখতেন , মাখন না! যে যত পার খাও!''

মাহমুদুল হক, সত্তর দশক।
মাহমুদুল হক

''বটু মানে মাহমুদুল হকের সাথেও খুব ঘনিষ্ঠতা ছিল।ওর প্রতিদিনকার ব্যপার স্যপার জানতে পারতাম।ও একটা কেস! ও অনেকগুলো লেবেলে জীবন যাপন করত।ওর কথা ছিল: মানিক বাবুর পর বাংলা কথাসাহিত্যে আর কিছু লেখবার নেই।এটা ওর মনে বধ্বমুল হয়ে গেড়ে বসেছিল।স্ত্রীর সন্দেহবাতিকগ্রস্থতাও মানিকের চরিত্রদের ছকে বাসিয়ে কথা বলত।

এসব হয়েছে নিজের লেখার অবস্থান জেনে যাবার পর।আর শ্যমল গংগোপাধ্যায়ের মহা ভক্ত ছিল।শ্যামলও ওর লেখা খুব পছন্দ করত।কিন্তু ঐ মানিক গো ওকে আর কখনো ছেড়ে যায় নি।ওটাই ওর ক্যরেকটার।হ্যাঁ, ওর দেখবার ব্যপারটাও ঐ গোয়ের মতই ছিল।ওর বাবা শোনার ব্যবসাটা ওর হাতে তুলে দিল; তাঁতিবাজারে গিয়ে সোনারুদের সাথে বসে গয়না গড়বার খুঁটিনাটি হাতে কলমে শিখেছিল।আরো সব অদ্ভুত ব্যপার স্যাপার!

(নেশার আড্ডা) যা হত ওর বাসাতেই।গাজাটা ও শেষ পর্যন্ত চালিয়েছে।নিউমার্কেটের সামনের বস্তিতে নিজে গিয়েই কিনত এক বুড়ির কাছ থেকে।বুড়িকে ডাকত নানি বলে, বলত: কি দাও নানি, ধক লাগে না।

বুড়িরওত খদ্দের ধরে রাখতে হবে।ধুতরা মিশিয়ে দিত।এর মধ্যে ফোনে ওর মেয়ে বলল: বাবার খুব খারাপ অবস্থা।গিয়ে দেখি রক্ত পড়ে টড়ে বিচ্ছিরি অবস্থা।আরে পেছন দিয়ে।আমাশা, ডায়রিয়া সব একসাথে।খুবসে গাজা খেয়েছে, তার পর মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করছে, ঘরে সব সময় মিষ্টি থাকে, ঐ দিন নাই, রাতও গভীর, বাইরে মিষ্টির দোকানগুলো বন্ধ।ফ্রিজ খুলে মধুভর্তি একটা বয়াম খুলে পুরো বয়াম সাবড়ে দিয়েছে।তারপর যে রক্ত পড়া শুরু হল, তা আর থামে না।মহাখালীতে নিয়ে যেতে হয়েছিল।

(ব্যবসাপাতিতে) ওদিকে খুব টনটনে ছিল।সব ধনি লোকদের স্ত্রীরা আসত।কার কাছে বিশ লাখের, তিরিশ লাখের জড়োয়া বিক্রি করতে হবে তা লিস্টি করা থাকত।ইন্টার পার্সোনাল স্কিল অত্যন্ত ভালো ছিল।ব্যবসার প্রয়োজনেই পাথর নিয়ে বেশ পড়াশোনা করত, মহাজাতকের সাথেও খুব অন্তরঙ্গতা ছিল।আমরা একসাথে মহাজাতকের কাছে যেতাম।মহাজাতক ব্র্যন্ডিংটা বটুরই অবদান। রাশিফাশি, পাথর নিয়ে ব্যস্ততা দেখে বটুই মহাজাতককে মানানসই পোশাক পরবার পরামর্শ দিয়েছিল।

এসবের মধ্যে কোন কাল্ট ছিলনা।তবে ওর মারফতিতে ঝোঁক ছিল।ওটাও আর সব গোয়ের মতই।ঐসব নিয়ে পড়ত, ঐসবের লোক জনের সাথে মিশত।(লেখার ভাষা) ওটা ওদের পরিবার পশ্চিম বঙ্গের যেখান থেকে এসেছিল সেখানকার ভাষা।ঘরোয়াভাবে ওরা ঐ ভাষাতেই কথা বলত।''

বেলাল চৌধুরী

অক্টোবার/২০০৮

ম্যঞ্চেস্টার

বানান প্রসঙ্গে :  তরঙ্গ প্রচলিত বাংলা বানান অনুসরণ করেছে।চয়ন খায়রুল হাবিবের মূল ব্লগে এ সাক্ষাতকারটিতে ঈ, ঊ, ণ, চন্দ্রবিন্দু ব্যাবহার করা হয় নি।তরংগ

বেলাল চৌধুরী, চয়ন খায়রুল হাবিব।ম্যানচেস্টার, যুক্তরাজ্য।২০০৮।