ফ্রান্সে প্রকাশিত বাংলা ওয়েবজিন। প্রকাশক : প্যাট্রিসিয়া গিদাস, ভ্যান, ৫৬০০০, ব্রিটানি, ফ্রান্স। সম্পাদক : নাসরিন-জয়া হক, চয়ন খায়রুল হাবিব। Contact : choygypsy@yahoo.com

Thursday, February 11, 2021

রাজকুমারীর নিহত চোখের কাজল

।।মাহবুব শাহরিয়ার।।


পৃথিবীর সব ফুল এখনো ঝরে নাই, সবে শুরু। এখনো রবি শংকর আর আলি আকবর খানের যুগলবন্দী শেষ হয় নাই, চলে যাচ্ছে। শ্রুতিমধুর ডাটা থেকে নিংরে দিচ্ছে রস, বেখেয়ালে হারিয়ে যাচ্ছে শহর। একটু একটু করে সব রঙ হারানোর অপেক্ষায় কিছু মৃতপ্রায় দেয়াল কোণঠাসা,ভীত, মুমূর্ষু তবু নিজ নিজ ইতিহাসের পুথি মেলে আছে। সেই কবে পা পিছলানো কিশোরির অভিমান , এখনো পুথি তে লিখে রেখেছে সময়। কোনো কোনো দেয়ালে পেয়ারা গাছের আদর ঝুলে থাকে, নাকি নেই ! যে পেয়ারার কামড়ের ভেতরে লুকানো লাল শরীরে গাঁথা নরম বিচির সারি। কে খোজে , কে খোজে সেই সময় আরাধনার!

বলদা গার্ডেনে ডেকে যাচ্ছে একনাগাড়ে যত পাখি, ভোর থেকে রাত সবঠাই থাক ওদের দখলে করুক মাখামাখি। ঝুলে থাক বাদুড়ের দল, একটু উড়াল দিয়ে ঘুরে আসুক কবরখানার দিকে। আবার ফিরে আসুক নিজ নিজ ডালে, ডানা ঝাপটাক আর কিচির মিচির করুক। তবুও মোরের সরকারী ফুলগাছ থেকে দূরে থাকুক, ওদের গায়ে ইউনিফর্ম। ওদের গায়ে দর্গন্ধ, ওরা ছোঁয়াচে রোগের আখড়া। সমস্ত ইউনিফর্মের গায়ে থুতু দিয়ে যাক পুরান এই নগরের বান্দরে রা, ওরাই ভাগীদার সমস্ত শিল্প আর কলার। এখনো তারা হাঁটে কার্নিশে কার্নিশে আর ভাবে ‘ফুল গুলো সব গেলো কোথায়?’

এপাশ ফিরে শোয়, ওপাশ ফিরে শোয় দুশ্চিন্তার কোলের সন্তানে রা। দুশ্চিন্তা ভাইগা যাওয়ার জলপথে নাই সুখ, সমস্ত ঘাট আর আঘাট ভরে গেছে সিমেন্টে, পাথরে , আলকাতরায়। দুর্গন্ধ চাপা দেয়ার ব্যার্থ চেষ্টা বুকে নিয়ে ধুকে ধুকে চলে নদীর মরা দেহ কোনো গভীর রাস্তার অতলে। এখনো এপাশ ফিরে শোয় শুধু দুর্গন্ধ আর কিছু বিপ্লবী কনডম, বর্ষার আপ্লুত কালাপানির উস্কানির কৌশলে।

এই দরদীর আরবান লুঙ্গি যাইতে চায় ইংলিশ রোডের আড্ডায়। সাদাকালো ললিতার ছবি ভাবে, তাড়ির গন্ধ ও। সুখটানের বাঁধা নাই , মাইট্যা বাঁশি তে যে যেমনে ইচ্ছা করে সুর। কারোর ই সেইখানে বিসমিল্লা খানের স্বপ্ন নাই, ছিলো না কখনো। সেইখানে আর মারামারি করে না কুংফুর মাইরপ্যাচে নাদিম আর তিব্বত। ধুন্দুমার প্যাচ মরে অলিতে গলিতে রাজনীতির বুটের তলায়, ঠিক যেন বর্ষায় হতোদ্যম কেঁচো যার আবাস ছিলো ধোলাইখালের পাড়ে। ।

সময় যেনো বন্ধুর পুরোনো ইটের দালানের বৈঠক খানায় একটা বিশাল ইউরোপিয়ান পেইন্টিং এ এক অচেনা নারীর চেনা চোখের বিহ্বল চাউনি। দেখতে থাকি দোতলায় দাড়ায়া, পাশের শতবর্ষী দেয়াল যেনো ভিক্ষা চায়। মাথার ভেতর শত কামারে পিটায় সেই দেয়াল বাঁধার শিকল । মুগ্ধতা যেনো বন্দী এই স্মগের হেরেমে, কানতে ভুলে যাওয়া বিষণ্ণ রাজকুমারীর নিহত চোখের কাজল।

।।মাহবুব শাহরিয়ার।।

Painting : Woman With the Lamp", by S.L. Haldankar. 1945–46