ফ্রান্সে প্রকাশিত বাংলা ওয়েবজিন। প্রকাশক : প্যাট্রিসিয়া গিদাস, ভ্যান, ৫৬০০০, ব্রিটানি, ফ্রান্স। সম্পাদক : নাসরিন-জয়া হক, চয়ন খায়রুল হাবিব। Contact : choygypsy@yahoo.com

Saturday, February 13, 2021

কামাসূত্রা কমিক্স ও ভালবাসা দিবসের শাম্পাইন

।।বাৎসায়ন।।ইওনা ভাউত্রা।।বেগম রোকেয়া।।

।।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।।সলিল চৌধুরী।।চয়ন খায়রুল হাবিব।।

বিশ্ব বাৎসায়ন দিবস।ঢাকার ফুটপাতে ভিআইপি ভ্যালেন্টাইন দম্পতি।

কামসূত্রের লেখক বাৎসায়ন স্বয়ং বলে বসতে পারতো, ইয়োনার কমিক্সের সাথে আমার ঐতিহ্যবাহী লাগালাগির কিচ্ছাকাহিনী মেশানো কি ঠিক হলো! একটা জনরা থেকে আরেক জনরায় অনুবাদ, অবলম্বন সব ক্ষেত্রে কপিরাইট রক্ষার দরকার।কপিরাইট ছাড়া আরেকটি জায়গা  হচ্ছে 'অনুভূতিতে আঘাতে'র নামে বিগট্রির গিঠ্যু। মৌলবাদি জঙ্গিরা মামলার আগেই শিল্পীকে, প্রকাশককে জানে মেরে ফেলতে রাজি।নবিদের অনুসারীদের মতো, অনেক কবির অনুসারীও বিগট্রি-গিঠ্যুর শিকার।

ভিক্টর হুগোর নাতিরা প্যারিসের আদালতে অভিযোগ দায়ের করলো যে, তাদের দাদার লা মিজারেবল, নটরডেমের কুজো নিয়ে মিউজিকাল বানানো যাবে না।বিচারক রায়ে জানালো যে খুব যাবে, শুধু মিউজিকাল না, পুরোটা বা আংশিক অভিব্যাক্তিজাত যে কোনো মাধ্যমে ব্যাবহার করা যাবে, পর্নোগ্রাফিতেও।আমরা যাদের কাজ এখানে ব্যাবহার করছি, ইয়োনা ভাউত্রা ও চয়ন খায়রুল হাবিব ছাড়া আর সবাই প্রয়াত।রবীন্দ্রনাথের গল্প অবলম্বনে নাটক, সিনেমা, নৃত্যনাট্য হচ্ছে।বড়ত্বের একটা লক্ষণ নমনীয়তা।আমরা যেভাবে মিশিয়েছি তাতে রবীন্দ্রনাথ, সলিল চৌধুরী নিশ্চিত মজা পেতেন।বেগম রোকেয়ার হাসিমাখা ছবি পাওয়া যায় না।ইয়োনার কাজ দেখে উনিও যে ঠোট টিপে হাসতেন তা লেখার অপেক্ষা রাখে না।আমরা গনৎকার নই।কমিক্স অবলম্বন করে বিশ্বখ্যাত সিনেমা এসেছে।কমিক্স পরিচিতির শুরুতে আমরা তরঙ্গ টমাটো মিটারে যেরকম ভারতীয় ফায়ার ও ফরাসি ব্লু ইজ দা ওয়ার্মেস্ট কালার সিনেমার আলোচনা করেছি, সেরকম বাঙ্গালির সবচেয়ে ঘরোয়া নামগুলোকে হাস্যচ্ছলে পরিবেশন করছি।তরঙ্গ

মোরা ভোরের বেলায় ফুল তুলেছি, দুলেছি দোলায়
রবীঠাকুর ও  সলিল চৌধুরীর বানীতে

''মোরা ভোরের বেলায় ফুল তুলেছি, দুলেছি দোলায়
বাজিয়ে বাঁশি গান গেয়েছি বকুলের তলায়
হায় মাঝে হল ছাড়াছাড়ি, গেলেম কে কোথায়
আবার দেখা যদি হলো সখা, প্রাণের মাঝে আয়''*

''দে দোল দোল দোল, তোল পাল তোল
চল ভাসি সবকিছু তাইগ্যা,
মোর পানিতে ঘর, বন্দারে আসি তোর লাইগ্যা
দে দোল দোল দোল, তোল পাল তোল
চল ভাসি সবকিছু তাইগ্যা......**

সুলতানার স্বপ্ন : বিশ্ব কলা দিবস
সুলতানার স্বপ্নে***

সহসা আমার পার্শ্বে একটি ইউরোপীয় রমণীকে দণ্ডায়মান দেখিয়া বিস্মিত হইলাম। তিনি কি প্রকারে আসিলেন, বুঝিতে পারিলাম না। তাঁহাকে আমার পরিচিতা ‘‘ভগিনী সারা’’ (Sister Sara) বলিয়া বোধ হইল। ভগিনী সারা “সুপ্রভাত” বলিয়া আমাকে অভিবাদন করিলেন! আমি মনে মনে হাসিলাম, —এমন শুভ্র জ্যোত্স্না-প্লাবিত রজনীতে তিনি বলিলেন, ‘‘সুপ্রভাত।’’ তাঁহার দৃষ্টিশক্তি কেমন? যাহা হউক, প্রকাশ্যে আমি প্রত্যুত্তরে বলিলাম,—“আপনি কেমন আছেন?”

“আমি ভাল আছি, ধন্যবাদ। আপনি একবার আমাদের বাগানে বেড়াইতে আসিবেন কি?”

আমি মুক্ত বাতায়ন হইতে আবার পূর্ণিমা-চন্দ্রের প্রতি চাহিলাম,—ভাবিলাম, এ সময় যাইতে আপত্তি কি? চাকরেরা এখন গভীর নিদ্রামগ্ন; এই অবসরে ভগিনী সারার সমভিব্যাহারে বেড়াইয়া বেশ একটু আনন্দ উপভোগ করা যাইবে।

সুলতানার স্বপ্ন : বিশ্ব গাজর দিবস
দার্জিলিং অবস্থানকালে আমি সর্বদাই ভগিনী সারার সহিত ভ্রমণ করিতাম। কতদিন উদ্ভিদ-কাননে (বোটানিক্যাল গার্ডেনে) বেড়াইতে বেড়াইতে উভয়ে লতাপাতা সম্বন্ধে— ফুলের লিঙ্গ নির্ণয় সম্বন্ধে কত তর্ক-বিতর্ক করিয়াছি, সেসব কথা মনে পড়িল। ভগিনী সারা সম্ভবত আমাকে তদ্রূপ কোন উদ্যানে লইয়া যাইবার নিমিত্ত আসিয়াছেন; আমি বিনা বাক্য ব্যয়ে তাঁহার সহিত বাহির হইলাম।

ভ্রমণকালে দেখি কি—এ ত সে জ্যোত্স্নাময়ী রজনী নহে!—এ যে দিব্য প্রভাত! নগরের লোকরা জাগিয়া উঠিয়াছে, রাজপথে লোকে লোকারণ্য ! কি বিপদ! আমি দিনের বেলায় এভাবে পথে বেড়াইতেছি! ইহা ভাবিয়া লজ্জায় জড়সড় হইলাম—যদিও পথে একজনও পুরুষ দেখিতে পাই নাই।

পথিকা স্ত্রীলোকেরা আমার দিকে চাহিয়া হাস্য পরিহাস করিতেছিল। আমি তাহাদের ভাষা না বুঝিলেও ইহা স্পষ্ট বুঝিলাম যে, তাহাদের উপহাসের লক্ষ্য বেচারী আমিই। সঙ্গিনীকে জিজ্ঞাসা করিলাম—‘‘উহারা কি বলিতেছে?’’

উত্তর পাইলাম—“উহারা বলে যে, আপনি অনেকটা পুরুষভাবাপন্ন।”

“পুরুষভাবাপন্ন! ইহার মানে কি?”

“ইহার অর্থ এই যে, আপনাকে পুরুষের মত ভীরু ও লজ্জানম্র দেখায়।”

“পুরুষের মত লজ্জানম্র!” এমন ঠাট্টা! এরূপ উপহাস ত কখন শুনি নাই। ক্রমে বুঝিতে পারিলাম, আমার সঙ্গিনী সে দার্জিলিংবাসিনী ভগিনী সারা নহেন—ইঁহাকে আর কখনও দেখি নাই! ওহো! আমি কেমন বোকা—একজন অপরিচিতার সহিত হঠাত্ চলিয়া আসিলাম! কেমন একটু বিস্ময়ে ও ভয়ে অভিভূত হইলাম। আমার সর্বাঙ্গ রোমাঞ্চিত ও ঈষত্ কম্পিত হইল।     (অংশ)

আজকে ভালবাসা দিবস।
ঘরে পানি নাই, শুধু শাম্পাইন।
ভালবাসা দিবসের শাম্পাইনে****

একটু ফরাসি ধাঁচে 'শাম্পাইন' লেখার চেষ্টা করলাম।ছেলে মাতিস-জ্যোতি, ছেলের মা প্যাটির কাছে তা তেমন ফরাসি না হলেও, ওরা দুজনই শ্যাম্পেন নিয়ে আমার সমঝদারিতে আস্থাবান।হবে না কেনো?বাংলা আরবি মেশানো বিরল কিছু নামধারীদের ভেতর আমি একজন সনদপ্রাপ্ত ওয়াইন কনোসোয়া, ইধারকা ওয়াইন উধারকা বেচার কাজ করেছি বিলাতের মেফেয়ারে, উইম্বলডনে, মিডেলসেক্সে।

ফরাসির কাছে শাম্পাইন, ইংরেজের কাছে শ্যাম্পেন, অক্ষর ধরে পড়তে গেলে চাম্পেগিনি, জার্মানরা যেভাবে বলে শাম্পানিইর তাতে মনে হয়, এই নরম পালকসম পানীয়টির প্রতি তারা কোনো কারণে ক্ষেপে আছে।অনেকটা ব্রিটিশ রাজকীয় বিমান বাহিনীতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আব্বার করা আমার বড় বোন হালিদা ছবির ইংরেজি নামের বানানের মত, যা দাঁড়িয়েছে হালিদা চাবিতে, হাঁটুতে বুদ্ধিওয়ালা সৈনিককুলের কাছে হইলদা চাবি।আমার চয়নকে বানিয়ে ফেলা হয়েছিল চায়ান!

ফরাসিরা তাদের শাম্পাইনের ব্র্যান্ড নাম থেকে, পাচন ও গাজনের পদ্ধতি, কোন এলাকার কোন আঙ্গুরে শাম্পাইন বানানো যাবে তা নিয়ে প্রচণ্ড স্পর্শকাতর।শাম্পাইন হচ্ছে শাম্পাইন নামক এলাকার স্পার্কলিং বা বুদবুদে ঝলকানো সাদা আঙ্গুরের ওয়াইন।অন্য কোনো এলাকার একই জাতের আঙ্গুরে, একই পদ্ধতিতে বুদ্বুদী ওয়াইন বানানো হলেও তাকে শাম্পাইন বলা যাবে না।বিশ্বখ্যাত শাম্পাইন কোম্পানি মোয়ে এন্ড সান্ডোনের শাম্পাইনের নাম মোয়ে।এই কোম্পানি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সাদা আঙ্গুর থেকেও স্পার্কলিং বানায়, তাকে বলা হয় মেথড শাম্পাইন।

বিশ্ব কুলফি মালাই দিবস
ওয়াইনে বুদ্বুদীর কেরামতি সহ, বিভিন্ন ওয়াইনের কদর বাড়ানোর পেছনে স্মরণযোগ্য ঐতিহাসিক নাম হলো ডম পেরিনিও, একজন খ্রিস্টান পাদ্রি, যার রাত দিনের সাধনা ছিলো ওয়াইনকে কি করে আরো দীর্ঘজীবী করা যায়, আরো স্বাদের করা যায়।পাদ্রি ডম পেরিনিওকে বলা যায় ওয়াইন ও শাম্পাইনের জালালুদ্দিন রুমি।সবচেয়ে দামি শাম্পাইনগুলোর একটার নামই দেয়া হয়েছে ডম পেরিনিও।মোয়ে এন্ড সান্দোনের সদর দফ্তরসহ বিশ্বের বড় ওয়াইনারি শাম্পাইন সংরক্ষণাগারগুলোর সামনে পাদ্রি ডমের মূর্তি দাড় করিয়ে রাখা হয়েছে, যা নবীন কনোসোয়াদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে তার সেই অমোঘ বাক্য, ওয়াইনের ভেতর বুদবুদের রুপালি ঝলকানি তৈরি করতে সফল ডম পেরিনিও চিৎকার করে বলেছিল,

''নক্ষত্রদের আমি বোতলবন্দী করেছি।''


জালাল রুমির সুফিবাদ ও ডম পেরিনিওর শাম্পাইন সম্প্রেষন একই গোত্রের এজন্য যে দুজনেই যুক্তি, তর্ক, জবরদস্তিতে না গিয়ে অনুশীলন হিশেবে নিয়েছিল মাটি থেকে আহরিত রসকে আত্মার রসে রূপান্তরের সাধনায়।রুমি ও শামসের যাপনের বিপুল অংশ কেটেছে পানশালায়, তা নিয়ে রুমি দিওয়ানে শামসে সরাসরি লিখেছে, মৌলবাদী অনেক অনুসারী তাকে প্রতীক হিশেবে নিতে জোরাজোরি করেছে।শাম্পাইন ও সুফিবাদ নিয়ে বললে তা শেষ হবার নয়।বুদবুদ ঝলকালেই তা যেরকম শাম্পাইন নয়,হক মাওলা বললেই সেরকম একজন সুফি হয়ে যায় না

তরঙ্গকে তাহলে খাটি শাম্পাইন বলছি কেনো?তরঙ্গর শুরুটা হয়েছে জুলেখা সিরাপে সমবেত লেখকদের নিয়ে, যাদের অনেকে ভিন্টেজ ওয়াইনের মত অনেক দিন ধরে লিখছে, আবার কেউ কেউ একদম সদ্য কাটা আঙ্গুর গাজানো তাজা ওয়াইন।জুলেখা সিরাপতো সিরাপ, একটা ফ্লেভার, কিন্তু তরঙ্গে যাওয়ার প্রক্রিয়াতে তা রুপালি বুদবুদে ঝলকানো শাম্পাইন।আমি চেখে দেখেছি, মনে হয়েছে বোতলবন্দী নক্ষত্রদের আমি আকাশে ছুড়ে দিয়েছি।(অংশ)

সম্পাদনা 
নাসরিন-জয়া হক

গানের বাণী, *রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, **সলিল চৌধুরী, 
সুলতানার স্বপ্ন ***বেগম রোকেয়া, 
ভালোবাসা দিবসের শাম্পাইন ****চয়ন খায়রুল হাবিব।
অলঙ্করণ, বাৎসায়নের কামসূত্র অবলম্বনে ইওনা ভাউত্রার কমিক্স বই থেকে।