ফ্রান্সে প্রকাশিত বাংলা ওয়েবজিন। প্রকাশক : প্যাট্রিসিয়া গিদাস, ভ্যান, ৫৬০০০, ব্রিটানি, ফ্রান্স। সম্পাদক : নাসরিন-জয়া হক, চয়ন খায়রুল হাবিব। Contact : choygypsy@yahoo.com

Friday, April 16, 2021

বকুল কথা : এপিক কবিতা

।।দিলরুবা পাপিয়া।।


বকুল কথা ১

তুমি হইলা দুধের মতো ফকফইক্কা
সাদা দিলের একখান মানুষ।

আইজও কী আসবা না?
তোমারে না দেইখা এই
আন্ধার কবরে থাকবার পারি না!
কেমন ডর ডর লাগে।

তোমার জন্মের সাহস!
যেমন, বান্ধের উজানে পানির পাক,
বানে ভাসা দুমড়ানো ইস্কুল ঘর,
গাঙ্গের মুখে ঢলনামা পানিতে ভাঙাচোরা ইন্দুমাঝির নাও-
এই সক্কল বিপদের আছান- তুমি!

যখন তুমি নিম গাছটা লাগাইলা
আমি ছিলাম দুইবেনী কিশোরী,
তখন থাইকা মনে মনে শখ করলাম
মরণের পরে এই নিমগাছই হইবো আমার
আসমান- জমিন!
জান তো, শখের দাম লাখ টাকা!
সেইদিনই মরণেরে ডাইকা কইলাম
আমার জানডা লওন যায়?
হায়রে মরণ!
হেরপর পৌষ- পার্বণের মেলা,
কানিহরি বিলের বাওয়াইত,
জড়ি বুবুর ফিরানি,
রামকৃষ্ণ মিশনের কিত্তন উৎসব
সব পার হইলো।
আচম্বিতই একদিন শাঁ শাঁ চান্নি রাইতে
মরণ আইসা আমারে বললো- যাও, হাউশ মিডাও!

মরন যে কী কয়!
হাউশ কি কচুরিপানার তুলতুলা ফুল- যে
ফুইট্টাই মিইট্টা যাইবো!

সেইথাইকা হাউশের কপালে সিন্দুর দিয়া
রক্তজবা হইলাম।
বোর্ড ইস্কুলের বিজ্ঞানের মাস্টার মশাই,
কালী মন্দিরের পূজারী দাদু,
হাসমত কবিরাজের দাওয়াই বাক্স
আমারে ঠিক খুঁজে।
জান, দাদীমা চোখের উপর রক্তজবা ভিজাইয়া
পট্টি দিতো।
কেন্ দিতো জানি না।
আচ্ছা, কবরের কী কোনো ঠিকানা আছে?
তাইলে দাদীমারে জিজ্ঞাসা করতে পারতাম!

মনে আছে, একবার বুকপকেটে আমার জন্য কয়ডা বকুল ফুল আনলা!
আহা...কি সুবাস!
কয়দিন ধইরা তোমার লাগি খুব পরাণ পুড়ে
আমার মন টিকে না।
খালি বকুল হইতে ইচ্ছা করে।
খালি বুকপকেটে থাকতে ইচ্ছা করে।
রাখবা?

৭/০১/২১

বকুল কথা ২ : শাদা দিলের বান্ধব

তোমার লাগি আমার দিনরাইতের অপেক্ষা!
দিনরাইত বলাও ঠিক না,
কবরের কি কোনো রাইত দিন হয়!

জান, ফকফকা রৈদের দিন, ভাসা চান্নি রাইত আমার খুব পছন্দ আছিলো!
কেমন আচানক কথা- আজকাইল আমারে আন্ধারে টানে!
আন্ধার আমারে বেতফলের মায়ায় জড়ায়া রাখে।
আর কুসুম কুসুম আন্ধারে বইসা দুনিয়ার তামাম ঘটনা বায়োস্কোপের মত চোক্ষে ভাসে।
যৌতুকের অত্যাচারে মালতি পিসির আত্মহত্যা, সোহানা বুবু মস্ত পাশ দিয়া সোনার মেডেল পাওয়া, গেরামের ইস্কুল সরকারী বানাইয়া আব্বাস চাচার মিষ্টি বিলানো, বিলের বাউয়াইত বাড়িভরা নাইয়রিতে বাড়ি গমগম- সকল কথা পইপই কইরা মনে আসে।

তোমার কথা খুব মনে বসে।
বুকের ভিতরে একটা কষ্ট হয়।
কিন্তু কষ্টটা কেমন তা বলতে পারবো না!
তুমি বোঝো?
হাউশ কইরা মরণের আবদার করলাম।
মরণ বুঝলো, কিন্তু পরাণ তো কিচ্ছু বোঝে না।
সে তোমারেই খুঁজে।
কবরখানার বাগানে বইসা
কেবলই তোমার চক্ষে আসমান দেখবার চায়;
আসমানের তারা দিয়া তারাবাত্তি জ্বালাইতে চায়!

বড়দাদীর কবরের পাশে কামিনীফুলের গাছটা আইজও কি আছে?
আহারে- কামিনী তলায় তোমার-আমার কতো স্মৃতি!
সাপখোপ জিনভূতের ডরে রাইতের বেলায় কেউ
সেই পথ মাড়াইত না।
আমিও ভয়ে আঁচলা টাইনা, চক্ষু বুঁইজা,
চড়কপুজার খাম্বা হইয়া দাঁড়ায়া থাকতাম।
তুমি রোজ আইসা আৎকা এমন কইরা জড়াইতা-
আমার বুকটা ফলি মাছের মতো লাফাইয়া উঠতো।

আচ্ছা, তোমার কি আজকাইল আজাইর নাই?
আগে কবরের ভিটা সাফ করতা,
শুক্কুরবারে আতর ছিটাইতা,
আগরবাতি দিতা।
আমার মাথার পাশেই দিলা হাসনাহেনা।
আহা...কি সুবাস!
কবরটা যখন সাফ- সরিন্দা করতা মনে লাগতো
এইডা আমি!
যেদিন মাঠ-ঘাট পসর কইরা চান্নি ওঠে
মনে লয় তোমারে লইয়া চান্নি পোহাই।
আইজও আসমান ভরা তারা;
মন চায়- তারা বাত্তি জ্বালাই!

বকুল কথা ৩ : বান্ধব আমার

পাষাণের বাথান তুমি !
কেন পণ করছো,
জগতের সকল দুঃখ তুমি একলা লইবা?
মানুষের মন তো দাবার ছক না
যে গুটির চালে চালে উঠবো নামবো!
আমারে তুমি মেলা কষ্ট দিলা বান্ধব!
নিজেরেও ঠকাইলা!
আমার বুকের মধ্যে যে কলমিফুলের বাস,
সে হাওরের নয়া পানির বাসনা,
ভাসা চান্যির শোভা
আর তিলপা বিলের মাচাঙে শুইয়া ইয়াসিন মাঝির গানে মাতাল হয়!
পাহাড়ি ঢল, কচুরিপানার ভাসান, সিন্দুর রঙা তুফানে তার কি আসে যায় ?
দাদীজান বলতো, আমি আমনের চারা।
বানের পানির লগে পাল্লা দিয়া আমিও বাড়ি।
তোমারে লইয়া নানান কিসিমের আলাপ করতো,
আর ডরাইতো-
বাপচাচার রেষারেষির আগুন না জ্বলে দুই ফেরেশতার দাওয়ায়!
আমি হাসতে হাসতে মাচাং গড়াইয়া বিল হই।
ও দাদীজান, বেহুদা ডরাও!
দাদীজান তখন গায়ের জোরে পান ছেঁচতো!
মনে আছে, হাসি বুবুর ফিরা উল্টার দিন
গরুর গাড়ির পিছনে তুমি-আমি পা ঝুলাইয়া নায়রী হইলাম।
সারা পথ বুবুর কান্দনে পশুপাখি কানলো।
তুমি বললা- বুবু যারে চায় তারে পায় নাই,
যারে না চায় সেই খড়ের পুঞ্জি পাশে বইসা কান্দন দেখে,
মন চায় খুন করি!
তখনও ভাটির আসমান টকটকা লাল।
আমি তোমার হাতটা শক্ত কইরা ধরলাম।
তুমি বললা- আসমান আছে চান উঠে নাই,
এমন অঘটন মানুষ দেখছে? তুমি হইলা আমার
আসমান ভিজা পুন্যিমা- আমার চান্নি পসর!
সেই তুমি আমি আজ কঠিনেরে ভালোবাসিলাম।
ব্যথার কালছিটা ক্ষতে দূর্বাঘাসের দাওয়াই,
বুকে পাষাণের তোড়া!
ফুল নাই, হাওয়া নাই, আহা নিদারুণ!
কী মানুষ তুমি;
কী মানুষ আমি;
সেই তোমারেই আমি পাষাণ কই!
এই যে আমি চিক্কুর দিয়া বলি; হাউশ কইরা মরণ চাইলাম,
মরণ কি হাউশের জিনিস যে সাইধ্যা লইলাম?
তোমারে ছাড়া আমার বাঁচনের চেয়ে মরণ সোজা!

৮/০৩/২০২১

বকুল কথা ৪ : আমার সুজন কালা

দিনে দিনে তোমার ছটফটানি বেজায় বাড়ছে!
কি তরস্ত পাঁচফুইট্টা আগ ভাত খাইয়া
বাড়ি ছাড়লা।
আর ফিরোনের নাম নাই-
ঘর বুঝি তোমারে আর টানে না!

হাটবারে মাছের বিরান, সাজনার চচ্চড়ি, ইচার
বড়া, আরও কত পদ রান্ধন হইলো!
তোমার আশায় বিরানভাজা শিক্কায় মজলো।
আর কাউরে না ওজর করো,
মায় যে তোমার লাগি কথার পাহাড় ভাঙে তার কথা তো ভাব!
এতো পাষাণ কেন তুমি?

আকন্দপুরের মিঠাই দিয়া
জ্যাঠিমার বিন্নির পায়েস, রসের পোয়া, লাল পাক্কন
সক্কলে হাউশ মিটাইয়া খাইলো,
আর তোমার মনি-মা দিনমান তোমার দেহনে
উপাস করলো।
জামবাটির পায়েস, আর মনি-মার অন্তর
দুই-ই বেজায় মিঠা!
আর দাদীজান, সে-তো
তোমারে লইয়া সারাবেলা মাতম করে!
জ্ঞানবাড়ির ঘাটে রোজদিন তালাশ করে।
মনু মাঝির নাওয়ের পাটাতন এখন দাদীজানের জলচৌকি!

আমার মা কখন তোমার মনি-মা হইলো
এই তারিখ যেমন জানো না,
কবে তোমার লগে আমার মন বাঁধলো সেইটাও আমি জানি না!
আমগর এক পাতে খাওনের বয়স যতো,
মন ডাঙ্গরের বয়স হের চেয়েও বেশি!

মা দাদীজানের পেটের সন্তান না, তবে আত্মার ধন।
সেই ধনের মান রাখতে তুমি আইজ বৈরাগী!
আমারে ভুইলা যাও বান্ধব!
বাড়িত আসো, এই মিনতি করি!
তোমার আমার ইটের দলান না উঠুক,
ব্যথার পাকুড় গাছতলে বইসা থাকি দুই চাতক পাখি
এক ঢলক মেঘ যদি পড়ে!

১৭/০৩/২০২১

বকুল কথা ৫ : শীত কালিয়া সুজন

চান্দের নজর আবছা হইলে তোমার চিন্তায় ডুবি!
শ্বাসের টান, ফোলা ফোলা চোখ,
হাঁচি- কাশি কাঁহাতক সওয়া যায়! তয়
জিব্বার লালচ কইলাম
একফুডাও কম আছিলো না!
চাচীজীরে চইন দিতা না!

দালান ঘরের বারান্দার
তুশের আইল্লায় এহনও আগুন দিতে হয়?
দাদীজানের পান-কালিজিরা বাটা,
বড়চাচার খেজুর গুড়ের চা
আর রোজদিন বেইন্যা- বৈকাল
রসের চিতই।
মা-জেঠীগর আজাইর নাই!

আজকাইল নাকি শীত পড়ে না?
দাদীজান বলতো- মাঘের শীতে বাঘ কাঁপে!
কেমন শীত পড়লো,
চাইরকুড়ি ছয় বয়সের দাদীজান আমার মচমচাইয়া চলে!
সক্কল কথা জানতে ইচ্ছা করে!

কামিনী তলায় শুইয়া কানটা খাড়া রাখি!
কখন তুমি ক্ষেতে যাও, কখন বিলে,
কখন গাও- গোসলের চ্যাপচেপা মাথাখান লইয়া খাওনে বস!
কখন আমারে ভুইল্যা.....হাউশ কর!
হ্যা গো, লুকাও কেন্?
তোমার চোক্ষের টলটলা জল
ছানার পানির মতো বুকের খুপড়িতে ঝইরা
আমারও মন ভিজে!
দাদীজানের গীত আইজও শুনি।
দাদীজান নানা কিসিমের গীত গাইতো।
কতোদিন গীতের লগে দাদীজান সুর মিলাইয়া কানতো।
সময় সময় গীতের তকমা ছাইড়া
কাইন্দা বুক ভাসাইতো।
কেন্ কানতো?
তাঁর নসিবের ডেউয়া ফল কি তুমি?

শুনছি মানুষ মরলে তারা হয়!
কব্বরের আন্ধারে শুইয়া, কখন দিন কখন রাইত
ঠাওর পাই না।
আমি কইলাম তারা না, জোনাক পোকা হইতে চাই!
আন্ধার রাইতে বিলের দাওয়ায়
তোমার লগে পলামুঞ্জি খেলুম।
খেলবা তো?

২২/০৩/২১

বকুল কথা ৬ : একাত্তরের মর্সিয়া

আম গাছটায় ঝাইক্যা বোল ধরছে,
মুঞ্জির চেয়ে কাঁঠাল গাছে পাতা-ই কম ঠেকে,
লেম্বু গাছে বাঁশের ঠিকাতেও চলেতেছে না।
গাছ- গাছালি ফলের ভারে নতজানু!
কথায় আছে না- রাখে আল্লাহ মারে কে!
গিজগিজা মিলিটারি, গেরামকে গেরাম পুড়তাছে,
সপ্তা ধইরা ধানের ডুলি জ্বলতাছে।
কিন্তু মানুষ তো খাওন বেগারে মরে নাই।
আচানক কারবার!
রাঙ্গা টুকটুকা দাদীজান পান ছেঁচে
আর দুঃখের পেচাল- আচাল পাড়ে।
দাদীজানের কথা কইলাম ওজনদার,
পাক কালামের মতো খাসা!
আমার বাদলা, হাসেন- হোসেনের লাহান
শহীদি মরন পাইছে।
এক ঢোক পানির লাগি কারবালা হইছে!
কঠিন ইয়াজিদ আমার বংশের বাতি নিভাইছে ।
শাওন মাইস্যা ভরা গাদলায় নাতীর জন্ম হইছে।
দাদীজান তাই বাসনা কইরা ডাকে- বাদলা।
বড়জেঠা কবিয়াল মানুষ, নাম দিছে শ্রাবণ সম্প্রীতি।
সেদিন রাইতে খোয়াব দেখতাছি-
বিলে জাল ফালাইয়া সে আমার পিছে লাগছে।
আঁজলা ভইরা পানি তোলে আর ঝাপটায়!
পানির ঝাপটা খাইয়া চক্ষু খুইলা দেখি,
ও আল্লাহ, চোক্ষের সামনে- সে।
দাদীজান কুপিবাত্তি ধইরা তামশা দেখে
আর মিটমিটাইয়া হাসে!
চক্ষু কচলাইয়া ফিসফিসাইয়া কইলাম-
উরুম-দুরুম তুমি?
কতক্ষণ থাকবা?
তোমার বন্দুক কই?
এইদিনেও বেজায় মেঘ- তুফান!
পাতিলে একদানা ভাত নাই, এমুন ঘটনা আইজই পরথম!
ছোডচাচী দুই চুলায় রান্ধে! জেঠিমা
পোলারে ঘুমাইতে দিয়া দুয়ার পাহারা দেয়।
সকলের চক্ষু সজাগ!
ফজরের আগেই বাইর হইবো।
আন্ধার থাকতেই নদী পার হইয়া দলে মিলবো!
ভাতের থালা টাইনা
নিমকটা জিব্বায় ছোঁয়াইলো কি ছোঁয়াইলো না;
ছোডচাচা হন্তদন্ত হইয়া আসতেছে!
এর আগেই বাদলা ছুট...
ছুটতে ছুটতে বান্দা হাশরের ময়দানে আইসা ঠেকলো!
তিনদিন বাদলার রক্তস্রোত
আম গাছের শিরায় শিরায় হাহাকার করতে করতে স্তব্ধ হইয়া গেলো!
আর পোলার পা জড়াইয়া
জেঠিমাও সাত আসমানের দিকে উড়াল দেয়!

৩১/০৩/২০২১

বকুল কথা ৭ : বান্ধব দরদিয়া

তুমি চোক্ষের সীমানা ছাড়লা মেলা দিন!
কিন্তু মনের সুতলি ছিঁড়বার পারো নাই!
মন কইতো তোমারে ছাইড়া একরত্তি বাঁচন দায়।
জীবন বুঝি এমনই হয়, দিনও ফুরায়!
তা সুখেও ফুরায়, দুঃখেও ফুরায়।
চোক্ষের পলকে কাটে সুখের সভা।
দুঃখের নিশি যেন্ যাবর কাটে।
আইজও তোমারে খুঁজি তামাম বেলা
জানি নাই, তবু হাতড়াই মনের কুঠরিতে।
ছোঁয়া মেলে, সুবাস পাই হোক মনভুলে!
ভুল কইরা মাইতা থাকি দিনের ভাঁজে!
জানো তো, এই সমাজে মাইয়্যার হাজার দোষ!
পোলার যা খেয়াল, মাইয়্যার তাতেই সর্বনাশ।
পোলা হইলে ছেলেমিপনা, মাইয়া করলেই ছিনাল!
পোলার জিদ্দে বাদশা, মাইয়ার জিদ্দে বেশ্যা-
দাদীজান ছিলো আমার মতো, অল্প বয়সা রাঁড়ি।
ভাঙবো তাও মচকাইবো না!
চিক্কুর দিয়া কয়- কই সমাজ?
আমার পাতে ভাত দে!
কানুন বানাস?
আমারে বাঁধভাঙ্গা ঢলে ছুঁইড়া কই লুকাইলা বান্ধব?
বাপজানের কথাও আবছা মনে পড়ে।
আহা...আমার বাপজান!
দুধের মধ্যেও মইল আছে,
চান্দের কপালে ভাসে কলঙ্ক তিলক
শরতের সাদা আসমান ঘোলা করে একফুডা মেঘ।
কিন্তুক আমার বাপজানের মনডা এর চেয়েও সাদা!
এমন সাদা দিলের মানুষ তামাম জীবনে দুই-চারজনই দেখা যায়!
সে-ও আচানক রোগে আতকা চইলা গেলো!
তোমার মনে পড়ে, তালুকদার বাড়িতে আমি, তুমি
দাদীজান জারিগান শুনবার গেলাম?
জারির কাহিনী শুইন্যা দাদীজান কাইন্দা জারজার-
'মাগো রাঁড়ি, জি- গো রাঁড়ি, রাঁড়ি বিবি সখিনা
অক্ষই ঘরে তিনজন রাঁড়ি
খালি সোনার মদিনা!'
দাদীজানের লগে বিবি সখিনার জীবন তক্কেতক্কে মিলে!
দাদীজান জারি শুনে, আর পাক কালাম পড়ে,
আর আমি তহন তোমার চাদ্দরের প্যাঁচে ওম লই!
বান্ধব, আমি তোমার কব্বরের সিথানে
আগরবাতি হইয়া জ্বলি- তোমারে বাসনা করি!
তুমি ঠাহর পাও- বোঝো না তুমি?

১২/০৪/২০২১

দিলরুবা পাপিয়া
ঢাকা, বাংলাদেশ

পেইন্টিং, দিলরুবা পাপিয়া।