।।ফারহিন চৌধুরী।।
গতকাল বেশ বায়না করে বাসার সবচেয়ে সুন্দর রুমটা দখল করেছে। পুরনো রুম থেকে নাকি জানালা দিয়ে আকাশ দেখা যায়না। রাতের বেলা ঘুমানোর সময় শুটিং স্টার দেখে না বলে তার নাকি ইচ্ছে পূরণ হয়না। জানালা নেই বলে পাশের বাসার টুনটুনি পাখির সাথে গল্প করতে পারে না। তার জানালায় অপরাজিতা কেন থাকবে না সেই চিন্তায় দশবার হল ফুলের দোকানে ফোন করে অপরাজিতার ছোট্ট একটা চারা কিনেছে।
গতকাল সন্ধ্যা বেলা হাতে বড় একটা লিস্ট নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। অন্যদিন মাথা আঁচড়ানো থাকে না, পুরনো একটা ময়লা জামা পড়ে থাকে আর নিজের প্রতি এতটা অবহেলা করে যা হয়তোবা বলে বুঝাতে পারব না। কালকে তের বছরের ছেলেটিকে যেন তেইশ বছরের যুবক মনে হচ্ছিল। নীল একটা ফতুয়া আর সুন্দর একটা প্যান্ট পড়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। পাঁচ মিনিট ধরে দরজার পেছনে লুকিয়ে থাকে। মিষ্টি করে উঁকি মেরে হাসে। বড় লিস্টটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে একটানা মুখস্থের মত সব বলে গেল। প্রতি বাক্যের শেষে তার একটাই জোর গলায় কথা ছিল "জানালার পাশে বড় আকাশ ওয়ালা রুমটাই আমার চাই!"কথাটা শেষ করেই চিৎকার করে কাদতে থাকে। চোখের জল নেমে আসতেই বেহায়ার মত টিস্যু চেয়ে বসে। একটু রাগান্বিত চেহারা দেখলেই সরলভাবে বলে ওঠে" তুমি কি আমাকে এখন বকা দিবে?"
কিছুটা ব্ল্যাকমেইল করে গতকাল রাতে সবচেয়ে সুন্দর রুমটা দখল করে নেয়। গতকাল তার সব পোঁটলা পুটলি বেঁধে সেই রুমে হাজির হয়। তার কাছে একটা বড় টেলিস্কোপ আছে। রাতেরবেলা নাকি তারার সাথে গল্প করবে। তার কাছে একটা বড় গল্পের বই আছে। সবগুলো পাতা খালি। সেখানে সে নাকি জানালা দিয়ে দেখা মানুষের গল্প লিখবে। মাঝে মাঝে খুব হিংসা হয় আমি কেন ওর মতন ছোট নয় । নিজে নিজে নিজের নাম রেখেছে- অপরাহ্ন! গোধূলির আকাশ নাকি তার খুব ভালো লাগে। রাতের আগমন নাকি তাকে অন্য কাহিনী বলে চলে।
পর্ব:২
আমি কেন অপরাহ্নের মতো সরল ভাবে চিন্তা করতে ভুলে গিয়েছি? কেন আকাশ দেখলে আমার কল্পনা করতে ভালো লাগেনা? প্রায় পাঁচ বছর হলো ছেলেটির সাথে দেখা হয়েছে আমার। সিলেটের চা বাগানের বাংলোতে থাকাকালীন সময়ে এক অকস্মাৎ অভাবনীয় সময়ে আমার চিত্ত হ্রদয়ে আশির্বাদ হয়ে আসে ছেলেটি। সেখানকার একটা ছোট্ট পাহারি স্কুলে প্রায় বিনা পয়সায় বাচ্চাদের পড়াতাম। কোনো কোনো দিন শুধুমাত্র একটা ছাত্রের সাথেও ক্লাস নিয়েছি। বাসায় আরামে ঘুমোচ্ছে সব? না। ভাগ্যের পরিহাসে ভোরবেলা কাজের তাগিদে বেরোতো ছোট্ট শিশুগুলো। মাঝে মাঝে নিরুপায় হয়ে আমি তাকিয়ে দেখতাম। একবার দুবার রাতে গিয়েও পড়িয়ে এসেছি। কি দায় আমার ? কত টাকা পাব? না কোন দাবি বা আশা ছিলনা। মনে এক অদ্ভুত শান্তি পেতাম।
সকাল সাতটার দিকে স্কুলটির উঠোনে বসে আকাশপানে পর্বতমালার দিকে তাকিয়ে অবিরাম চোখের পানি ফেলতাম। খুব কষ্ট হচ্ছিল? না। একাকিত্ব হয়তোবা খুঁজে বেরাচ্ছিল। তখনই যেন দূর থেকে আট বছরের ছোট্ট মালু দৌড়ে এসে আমার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ত। নিষ্পাপ ছেলেটি ছোট্ট দুটি রুক্ষ হাত দিয়ে আমার চোখের পানি মুছতে মুছতে বলে উঠত "তুমি কান্না করছ কেন দিদিভাই? আকাশের রং এখনো নীল। সে তো বেজায় হাসছে। ওম্মা!!! হো হো করে দুজনই হেসে উঠতাম। ছেলেটা খুব অভিযোগ করত "মালু একটা নাম হলো? ধুর ছাই!" আমি বলতাম কি রাখতি? "অপরাহ্ন!!!"
দু বেলা কড়া এক্সপ্রেসো খাওয়া সেদিনের আমি আজ বদলে গিয়েছি। হয়তোবা চা বাগানের পরিবেশ আর সরল মনের মানুষগুলো আমাকে বদলে দিয়েছে। আট বছরের সেই মালু দিনে অন্তত তিনবার আমাকে চা বাগানের চা খাওয়াত। তার মায়ের কাছে বায়না করে চায়ের পাতা রেখে দিত। চায়ের থেকে ছেলেটির চেষ্টা আমাকে কাঁদিয়ে তুলত। নিজের বানানো মাটির চুলায় মিনিটে অসাধারণ চা বানিয়ে ফেলত। আমি নাকি তার প্রিয় মানুষ।
খুব খারাপ লাগে,যদি ওর প্রতি মায়া কখনো কমে যায়? যদি আমার প্রতি ওর ভালোবাসার সমাপ্তি ঘটে? গভীর রাতে মাথায় হাত রেখে একটা কথাই জানতে ইচ্ছে করে- "আজকে আকাশের সাথে কি গল্প করলি? আকাশের কোন তারাকে আমার নাম দিয়েছিস? আমাকে নিয়েও কি তোর ডায়েরিতে গল্প লিখছিস! ইশ্! আমি কি খুব বদলে গেলাম!
পর্ব: ৩
সিলেটে থাকাকালীন সময়ে নিজেকে খুব অসহায় মনে হতো। রাতেরবেলা হারিকেনের স্বল্প আলোয়ে দূরে জোনাকির হাতছানি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। মানুষের সাথে দূরত্বটা নিজেই নিজের অজান্তে তৈরি করে ফেলেছিলাম। সবাইকে খুব নিষ্ঠুর,নির্দয় মনে হতো। তবে সেই সময়ে একটা ছোট্ট ছেলে উপহার হয়ে আসে। গভীর রাতে শিউলি ফুলের গন্ধে যেন ঘুমটা ভেঙে যেতো। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই শিউলি ফুল দেখতে পেতাম। কাগজে লেখা থাকতো "সন্ধ্যেবেলা তোমার জন্য কুড়িয়েছি- অপরাহ্ন।" ফুলগুলো দেখলেই এক অদ্ভুত হাসি খেলে যেত। ফুলগুলোর সাথে কিছু বেলি ফুলের মালা থাকতো। সকালবেলা মালাগুলো হাতে শোভা পেত। স্কুলে ঢুকতেই অপরাহ্ন চেঁচিয়ে উঠতো- দিদিমণি আমার দেওয়া মালা পরেছে। কি মজা কি মজা! " ছেলেটি দৌড়ে এসে আমাকে বলতো"তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।" আমিও মিষ্টি হেসে মাথায় আদর করে দিতাম।
সেদিন ক্লাসে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে গেল। ছোট্ট ক্লাস রুমগুলোর দরজায় ভিন্ন ভিন্ন নাম লেখা। নাম গুলো যেন গভীরভাবে বাছাই করা। "আলো কক্ষ","মেঘমালা", "ধ্রুবতারা" আর আমার বসার রুমটি যেন বিশেষ কিছু- "আকাশের কলরব!" অপরাহ্ন নিজে নামগুলো লিখেছে। আমি নাকি তার আকাশের সবচেয়ে সুন্দর মানুষ। নিরব আকাশের কলরব। ভেতরে ঢুকতেই আমি অবাক। পাঁচ দশ জনের ক্লাসে প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী! দূর পাহাড়ের পাদদেশ থেকে সবাই এসেছে! এটা কি করে সম্ভব। শুনতে পেলাম, ছোট্ট ছেলেটি প্রত্যেক বাড়িতে গিয়ে প্রচার চালিয়েছে। বিনিময় আমি নাকি রাতের বেলা
জীবনের গল্পের আসর সাঁজাব। একদিন নাকি সবাইকে শহরে নিয়ে যাব। বোকা মন গুলোকে সেদিন কিভাবে বোঝাতাম যে শহর কোন সুন্দর জায়গা নয়। শহরের মানুষগুলো তোমাদের মত সরল মনের নয়। চিন্তার বেড়াজালে আটকে আছে ওদের জীবন। দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে সবাইকে কাছে টেনে নিয়েছিলাম। সেদিন তিরিশটা প্রাণের স্বপ্ন ছাড়া জীবনে কিছুই ছিলনা। বেশি টাকা পেতাম? মোটেও না। খুব বেশি সুখ ছিল? কি জানি। মাঝে মাঝে কিছুই বুঝতাম না। নিজেকে প্রতিবারের মত খুব অসহায় মনে হতো। সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হয়তোবা নিজেকে বুঝতে না পারা। আমি কি খুব বোকা ছিলাম নাকি এখন খুব বোকা হয়ে গিয়েছি। আমি আসলে মানুষটা কেমন?
পর্ব:৪
পাঁচ বছর ধরে আমি অপরাহ্নকে বোঝার চেষ্টা করছি। দীর্ঘসময় ধরে তাকিয়ে থাকি। আমার থেকে ওর বুঝ বেশি। কিন্তু আমার ভুলটা কোথায়? সেই চা বাগানের ছোট্ট ছেলেটি আমার প্রতি গোপন অভিযোগ নিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে। পাঁচ বছর আগে শুনেছিলাম তার রোজনামচার একটি বৃহৎ অংশ আমাকে নিয়ে। আমার থেকে ভাল সেই নাকি আমাকে চেনে। নিজেকে খুব বুঝতে ইচ্ছে করছে। চা বাগানে যেদিন আমাদের শেষ দিন ছিল, সেদিন সন্ধ্যায় অপরাহ্ন ডায়েরিটা আমাকে দিয়েছিল। আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেছিল "নিজেকে যেদিন ভালবাসতে ভুলে যাবে, সেদিন এই ডায়েরির প্রতিটা পাতা উল্টে দেখবে। তেমন সুন্দর করে লিখতে পারিনি তবে কথাগুলো বা অনুভুতিগুলো হয়তবা তোমাকে আনন্দ দিবে। খুব ব্যক্তিগত আর বিশেষ জিনিস এটা, যখন তখন খুলতে যেওনা! নিজের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেললে তবেই ভ্রমণ করে আসবে।"
ভাবা যায় এসব! অল্প বয়সের সেই বালক সাবলিলভাবে জীবনকে তুলে ধরল! আমি নাকি আকাশের কলরব! সত্যি বলতে আমার আকাশ বেশ শীতল, কোন শব্দ নেই। স্বপ্নগুলো হাঁরিয়ে গিয়েছে। শীতের সেই কুয়াশার চাঁদরে ঢেকে গিয়েছে। হুট হাট করে অপরাহ্ন মেঘের আড়াল থেকে উঁকি মারে "দিদিমণি, লুকোচুরি খেলবে না!" ভাবনার মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছি আমি। হঠাৎ পেছন থেকে অপরাহ্ন ডেকে উঠল "তোমাকে নিয়ে আমি আবার লেখা শুরু করেছি। কলমের কালি তোমাকে আমার থেকে ভাল চেনে।" আমি কিছুটা অবাক। খুব জানতে ইচ্ছে করছে কতটা বদলে গিয়েছি আমি। ভাবতে ভাবতে ইতিমধ্যেই চার কাপ এক্সপ্রেসো গিলে খেয়েছি। নিজেকে আসলেই ভালবাসতে ভুলে গিয়েছি। এইবার হয়তবা ডায়েরির পাতা ওল্টানোর সময়।
পর্ব ৫:
সবকিছু বুঝতে পারছি বলেই যত রকমের সমস্যা। বুঝতে পারলেও যন্ত্রনা। মনে হয় পাশের মানুষটাও ঝগড়া করতে ব্যাকুল হয়ে বসে আছে। নিজের মতামতের প্রতি খুব বিরক্ত আজকাল। সকালে আমি এমন কেন? আবার বিকেল হতেই যেন অন্য এক আত্মা এসে হাজির। চা বাগানের হাওয়া তীব্রভাবে লেগেছে যার সুবাস চিরস্থায়ী। অপরাহ্নের কথা মনে পড়লেই বিচ্ছেদের ব্যাথা শক্ত হয়ে ওঠে।
প্রথম পাতা ওল্টালাম। নিরিহ কিছু আঁকিবুকি। একটা নীল শাড়ি পরা মেয়ের ছবি। মাথায় সাদা গোলাপ আর হাতগুলো আকাশে মেলে ধরেছে। আকাশের বহু পাপড়ির খেলা। অ আ ক খ ... বর্ণমালার অপরূপ মিলন। বড় বড় অক্ষরে ইংরেজীতে লেখা- "হ্যালো, মিট মাই ব্যস্ট মিস!, আমার খুব ভাল লাগে যখন তুমি অবেলা বিকেলে পেছন থেকে আমাকে ডাক দাও। চা বানাবিনা বলে মিষ্টি বকা দাও। তুমি এতো ভালো কেন? পাশের বাড়ির রাহেলা সারাদিন বলে, আমি নাকি হতচ্ছাড়া একটা। আমার নাকি স্বপ্ন দেখতে নেই। তুমিই হয়তোবা সেই ব্যক্তি যার চোখে আকাশ ভ্রমণের স্বপ্ন দেখেছি। হারিয়ে যাবার গল্প শুনেছি। রাতের বেলার অজস্র তারার একটি তারা তোমায় দিয়েছি। তোমার সাথে আমি চলে যাব। নিবে আমাকে? আমার না এসব বলতে খুব লজ্জা করে যদি তুমি বকা দাও আর রাগ করে চলে যাও!
আমি একটা চায়ের দোকান দিব আর সেখানে তোমাকে ফ্রি চা খাওয়াব। তিন সত্যি ! তোমার চা খুব ভালো লাগে আমি জানি। বাইরে অনেক বৃষ্টি । আজকে আর লিখতে পারবনা। হাত ব্যাথা। ভিজে যাব। পরে তুমি বলবে "বোকা,ছাতা কই তোর!" উফ! খালি বোকা বলো তুমি আমাকে। আমি বোকা না। তোমার জন্য নীল ভালোবাসা।
পর্ব ৬
ফুচকার প্লেট নিয়ে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। টমেটোর মতো লাল হয়ে গেছে গাল। পার্কের শেষ মাথার টেবিলটায় প্রায় আধঘণ্টা ধরে অপরাহ্নের সাথে বসে আছি। কথাই বলছেনা। মানুষের মনটা পড়তে পারলে বেশ ভালো হতো। অজান্তেই চোখটা ভিজে গেল। "কান্না করছো তুমি? মিছে রাগ করতে নেই! তোমাকে আমার আগের মতো মনে হয়না, তাই কথা বলতে ইচ্ছে হয়না।"
বদলে গেলাম? কিভাবে? ব্যবহারে? ভুল হয়েছিল কোনো? অপরাহ্নের সামনে ডায়েরির পাতাটা ওল্টালাম, "তোমার সাথে ঘুরব বলে নতুন শার্ট পরে ৩ ঘণ্টা বসেছিলাম। তুমি ফোন করে বললে, "সময় নেই আমার!" আমার খুব কষ্ট হয়েছে। সেদিন আমার আকাশের তারাগুলো থেকে একটা তারা মুছে দিয়েছি। খুব কান্না করেছি। তুমি আমাকে জিজ্ঞেসই করলেনা আমার ভালো লাগা। তোমার টেবিলে একটা নতুন ড্রয়িং রাখলাম, একটিবারেও বললে না কেমন হল! আমি আর ছবি আঁকি না তাই। আমি খুব পঁচা?"
কথাগুলো পড়েই বুকটা কেঁপে উঠল! নিজের অজান্তেই অবহেলা করলাম! খুব সহজেই ভাবনাগুলো খেলে গেল, বাচ্চাটাকে বুঝতে ব্যর্থ হলাম??
কাছে যেতেই ফুচকার প্লেটটা ফেলে উঠে গেল। পেছন পেছন হাঁটলাম। পাশের মেয়েটার কাছ থেকে পকেট থেকে বেলি ফুল কিন আবার হাঁটা শুরু করল। মিনিট খানেক পর আমার হাতে ফুলগুলো দিয়ে দৌড়ে চলে গেল। কেন? কথা বলা যায়না আমার সাথে আর? মনের মধ্যে রাগ আর নিরীহ সব আবেগ নিয়ে দুজনই এক গোলকধাঁধায় ঘুরছি।
পর্ব ৭
বাসায় গিয়ে দেখি পুরনো রেডিওটাতে গান চলছে। বারান্দার দরজাটা খোলা আর অল্প হারিকেনের আলোয়ে মেঝেতে বসে অপরাহ্ন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে। "কান্না করছিস কেন? কি হলো?"
বলতেই বারান্দার দেয়ালের দিকে আঙ্গুল দেখাল "মরে গেল আমার নীল অপরাজিতার গাছটা!! গোলাপগুলোও শেষ! লাল পাতাবাহারের হাহাকার!!তুমি যত্ন করলেনা! বারান্দায় কেন যাওনি এতদিন!!!"
হতাশ হয়ে গেলাম। হাসিটা যেন ফিরে পাওয়া খুব কষ্টকর! একটার পর একটা ঘটনা মনে কঠিন আক্রোশের জন্ম দিচ্ছে ওর মনে। কিভাবে একটা ১৩ বছরের বালককে "না বলা কথার" ব্যাখ্যা দিব! লোকে যখন বলে তিরিশে পা দিল তবে বিয়ে আর হল না! কোথা থেকে এক শিশুকে তুলে এনেছে! আর কত কিছু! সমাজ ! আমারও ইচ্ছে হয় আকাশটাকে সাদা কালোর উর্ধ্বে
কল্পনা করতে তবে একটা সময়ে রংগুলো মুছে যায়। মুখে নাটকীয় হাসি এনে অপরাহ্নকে কাছে ডাকলাম -"এইবার ছাদে বাগান করব! সব নিয়ে আসব। তিন সত্যি!!"
কথাটা শুনে ওর বালক মন খুশিতে সাত আসমানের ভ্রমণে হারিয়ে গেল। এই সুযোগে লাড্ডু, জিলিপি, গোলাপজামসহ হরেক রকমের মিষ্টি দিয়ে দুজনে পেট পূজা করলাম। আমার মিথ্যে হাসি হলেও ওর নিষ্পাপ মনটা এক শীতলতার চাদরে দুজনকে বন্দি করল। ডায়েরির পাতা ওল্টালাম "তুমি লুকিয়ে লুকিয়ে রাতের বেলা কান্না কর, আমি দেখে ফেলেছি। আমিও এখন তোমার মত লুকিয়ে কান্না করি।তুমি আমি একসাথে করব সব।"