ফ্রান্সে প্রকাশিত বাংলা ওয়েবজিন। প্রকাশক : প্যাট্রিসিয়া গিদাস, ভ্যান, ৫৬০০০, ব্রিটানি, ফ্রান্স। সম্পাদক : নাসরিন-জয়া হক, চয়ন খায়রুল হাবিব। Contact : choygypsy@yahoo.com

Friday, April 16, 2021

বাংলা ছবিতে প্রিয় মেয়েদের চরিত্র

।জিনাত নেসার জামান।।

পৃথিবী জয় করার মতো প্রতিভাবান মেয়েদের নিয়ে চিন্তা একটু কম, তাদের দমিয়ে রাখা সম্ভব না, কষ্ট করে হোক আর সহজেই হোক- তারা জয়ী হবে।

তবে সাধারণ বাঙালী ঘরের সাধারণ মেয়েদের আত্ম নির্ভরশীলতা, আত্মমর্যাদার ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে তুলতে, আমরা পরিবার- পরিজনেরা হয়তো আরেকটু সাহায্য করতে পারি। এমনিতেই মেয়েরা বড় সেল্ফ ক্রিটিক, তার উপর সমাজ শিখিয়েছে মেয়েরা মায়ের জাত; হয় তারা দেবীর কাছাকাছি কেউ,আর নাহলে নীচের স্তরের- কিন্তু দোষগুন মিলিয়ে সমঅধিকার সম্পন্ন মানুষ না!

আজ.. বাংলা ছবিতে আমার প্রিয় কিছু মেয়েদের চরিত্র নিয়ে ভাবছিলাম-এরা একইসাথে সাধারণ আবার অসাধারণ, কমপ্লেক্স ও সরল- এককথায় কমপ্লিট মানুষ। 'গেরিলা'র বিলকিস (জয়া আহসান), 'প্রাক্তন' এর সুদীপা, 'দোসর' এর কাবেরী, 'মহানগর' এর আরতি- এরা সবাই মোটামুটি ৬০ এর দশক থেকে এখনকার সময়ের বাঙালী মেয়ে।ঋতুপর্ন ঘোষের অনেক উল্লেখযোগ্য ছবি থেকে মনে পড়ছে ১৯৯৪ সালের ছবি '১৯ শে এপ্রিল' এর মা-মেয়ে (সরোজিনী - অদিতি) কে। মা-মেয়ের সম্পর্ক নিয়ে সবাই অনেক ছবি দেখেছি- বড় অদ্ভুত রকমের যে এই সম্পর্ক!

মেয়েকে নিয়ে মায়েদের অনেক বেশী আশা- যা অনেক সময় মেয়ের জন্য কষ্টের ব্যাপার হয়, আবার মায়ের কাছেও মেয়েদের অনেক আশা থাকে। আরো অনেক মেয়ের মতো অদিতিরও বুঝতে অনেকটা সময় লেগে যায়- 'মা' ও যে একটা মেয়ে -তাঁর নিজেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকতে পারে- কাজে প্রতিষ্ঠা পেতে অনেক শ্রম সময় দিতে হয়েছে যাকে; সংসারের বা মেয়ের অনেক টুকিটাকি থেকে দুরে থাকা মা উপভোগ করেন নি। বহু বছরের অভিমান দূরে রেখেছে অদিতিকে মা'র কাছ থেকে, আর সেই অপরাধবোধে কুন্ঠিত মা- সরোজিনী, ন্যাশনাল সম্মান পেয়েও অপেক্ষা করে থাকেন মেয়ের স্বীকৃতীর জন্য। অনেক আঘাত পেরিয়ে তারা জানতে পারে ভালবাসায় তাদের কারো কখনো কমতি ছিল না।

২০০০ সালের ছবি - অপর্না সেনের রচনা, পরিচালনা ও অভিনীত 'পারমিতার একদিন'।পারমিতা তার এক্স- শাশুড়ীর শ্রাদ্ধে বসে আছে, পুরোনো দিনগুলো তার চোখের সামনে ছায়াছবির মতো ভেসে যাচ্ছে - আমরা দেখি কি অদ্ভুত সুন্দর সেই বউ-শাশুড়ীর সম্পর্ক ছিল, তারা একজন অন্যজনের মূল্য দিয়েছেন, শখের- কষ্টের সাথী হয়েছেন। প্রেমহীন দাম্পত্য জীবনের দুজন নারী। অসুস্থ ছেলের মৃত্যুতে শেষ সুর কেটে যাওয়ার পর আর সম্পর্ক টিকিয়ে রাখেনি পারমিতা, আজ একজন সফল নারী সে।

কতো যে কারণে দুজন মানুষের সংসার ভেঙে যেতে পারে, কিন্তু সেই পরিবারের- সেই সময়ের ভালোবাসার সব বন্ধন মানুষ ভুলে যায় না, তাই শাশুড়ীর শেষ অবস্থার খবর শুনে তার দেখাশোনা করতে চলে এসেছে পারমিতা। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের নিয়ে অনেক ভুল ধারণা ভেঙে যায় এই গল্পে।

অবশ্যই ছবির প্রধান আকর্ষন-এন্টারটেইনমেন্ট, কিন্তু একইসাথে একটা ভালো ছবি আমাদের অন্যের অবস্থানটা ভাবতেও শেখায়। মেয়েদের জন্য আমাদের একটু সংবেদনশীলতা অনেক সুন্দর দিন এনে দেবে।

জিনাত নেসার জামান
৭/০৩/২১
অটোয়া, কানাডা