।।অমিতাভ পাল।।
লোকটাকে খুব ভয় পাচ্ছে মেয়েটা। যেরকম দশাসই চেহারা, সারা শরীরে কিলবিল করছে পেশী- দেখলেই মনে হয় টিপে মেরে ফেলতে পারবে যেকোন মানুষকে। আর চোখগুলিও- তীক্ষ্ণ, কৌতুহলী, বাইরের কাউকে পোশাকের মতো খুলে ফেলে ভিতরের আমিটাকে নগ্ন করে ফেলা যেন কিছুই না তাদের জন্য।
এরকম সাধারণ একটা বর্ণনায় অস্বস্তি বোধ করা কেউ লোকটার আওতার বাইরে চলে গেলেই সে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে স্বাভাবিক ভাবেই। হয়তো কখনো কোন দুঃস্বপ্নে লোকটা ফিরে আসতেও পারে, কিন্তু ঘুম থেকে উঠে একগ্লাস জল খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লে স্বপ্নটা ফালতু হয়ে যাবে। তখন যতোই লোকটা দশাসই হোক বা যতোই তার পেশীগুলি কিলবিল করুক কিংবা যতোই তার চোখগুলি বাইরের কাউকে খুলে ফেলে ভিতরের আমিটাকে নগ্ন অবস্থায় বের করতে ওস্তাদ হোক- কিছুই যায় আসে না তাতে। কিন্তু মেয়েটা এভাবে সরে যেতে পারছে না কিংবা দুঃস্বপ্নকেও গ্লাসের জলে ডুবিয়ে মারতে পারছে না কেননা তার বাসার উল্টাদিকের জিমটাতে সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে লোকটা সারাদিন ব্যায়াম করে আর সে বাসা থেকে বের হলেই ড্যাবড্যাব করে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। এই নিদারুণ অস্বস্তি স্বাভাবিক জীবন কেড়ে নিয়েছে মেয়েটার।এখন সে রাস্তায় বের হতে ভয় পায়, বাসার জানালায় দাঁড়াতে ভয় পায়, এমনকি ব্যালকনিতেও সে আর যায় না পারতপক্ষে। এখন সে টবের গাছগুলিকে ঈর্ষা করে, ঈর্ষা করে রাস্তায় ইলেকট্রিকের তারে বসা কাকগুলিকেও। মানুষজন, কুকুর, দোকানপাট, সবজি, ফলমূল- সবাইকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে দেখে তার রাগ হয় খুব। উপায়হীন মেয়েটা এখন সারাক্ষণ উপায় খুঁজে বেড়ায় একটা স্বাভাবিক সাধারণ জীবনে যাবার।
২
উপায় হয়ে গেছে। সহজতম এই সমাধানটা কেন যে মাথায় এসেছে এতো দেরিতে! এখন মেয়েটা যখন তখন রাস্তায় বের হয়, ইচ্ছা হলেই দাঁড়ায় জানালায়, ব্যালকনিতে টবগুলির পাশে দাঁড়িয়ে গাছগুলির মতো সেও দেখে রাস্তা আকাশ, তার মন থেকে মুছে গেছে মানুষজন, কুকুর, দোকানপাট, সবজি, ফলমূলের প্রতি ঈর্ষা। উপভোগ করে একটা স্বাভাবিক সাধারণ জীবন।
মেয়েটা লোকটাকে বিয়ে করে ফেলেছে।
৩
বিয়ের কিছুদিন পরে কোন এক অবসর মূহূর্তে ঘর গোছানোর সময় মেয়েটা খুঁজে পেলো লোকটার একটা ডায়েরি। তাতে লোকটা লিখেছে- রাস্তার উল্টাদিকের বাড়িতে যে মেয়েটা থাকে, তার শারীরিক গঠন খুব চমৎকার। যদি ও আমার জিমে এসে ব্যায়াম করতো, তাহলে আমিতো কিছু টাকাপয়সা পেতামই- মেয়েটাও একটা সুন্দর শরীর পেতো এবং সেই শরীরের বদৌলতে হয়ে উঠতে পারতো নামকরা মডেল।
।।অমিতাভ পাল।।
৩১/০৫/২১
কভার ফটো ম্যানিপুলেশান : অনুপম নাথ, এপি