ফ্রান্সে প্রকাশিত বাংলা ওয়েবজিন। প্রকাশক : প্যাট্রিসিয়া গিদাস, ভ্যান, ৫৬০০০, ব্রিটানি, ফ্রান্স। সম্পাদক : নাসরিন-জয়া হক, চয়ন খায়রুল হাবিব। Contact : choygypsy@yahoo.com

Tuesday, March 2, 2021

উপসম্পাদকীয় : শামীমা বেগমকে বাংলাদেশি নাগরিকত্ব দেয়ার আমি ঘোরতর বিরোধী

।।তৃণা রাব্বানি।।


শামীমা বেগম, ১৫ বছর বয়সে এবং বর্তমানে।

সব শেষ খবর অনুযায়ী ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টের সব কজন বিচারক শামীমা বেগমের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের ব্যাপারে একমত হয়েছেন।ব্রিটেনে ফেরত এসে নাগরিকত্ব বাতিলের বিচারের আপিল করবার সুযোগ তারা শামীমাকে দেবে না।প্রধান বিচারপতি বলেছে, ব্রিটেন এখানে শামীমার মানবিক অধিকার লঙ্ঘন করে নাই, বরং নিজেদের ভূখণ্ডকে সন্ত্রাসবাদী ও তাদের সহযোগীদের হাত থেকে রক্ষা করতে চেয়েছে।আমি ব্রিটেনের সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের সাথে একমত।

কিন্তু ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেভাবে শামীমার বর্তমান নাগরিকত্বহীনতার ঘটনাকে বাংলাদেশের ওপর চাপাতে চাইছে, আমি তার ঘোর বিরোধী।ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ বলছে, মায়ের বাংলাদেশে জন্মসূত্রে শামীমা বাংলাদেশের নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারে।বাংলাদেশ বলেছে, তারা শামীমাকে নাগরিকত্ব দেবে না।বাংলাদেশের এই অবস্থানের সাথেও আমি একমত।

শামীমা বেগম কে?জন্মসূত্রে ব্রিটিশ শামীমার বর্তমান বয়স ২০।১৯১৫ সালে শামীমা ১৫ বছর বয়সে আরেক বন্ধুর সাথে সিরিয়াতে গিয়ে কিছুদিনের ভেতর আইসিলের এক ডাচ ছেলেকে বিয়ে করে।শামীমা তিন বার গর্ভবতী হয় এবং তিন সন্তানই জন্মের কিছুকাল পর মারা যায়।আইসিলের সামরিক পরাজয়ের পর শামীমা বর্তমানে সিরিয়াতে একটি শরণার্থী শিবিরে আছে।

ব্রিটিশ সাংবাদিকেরা কয়েক দফা শামীমার সাথে কথা বলেছে।প্রতি সাক্ষাতকারে শামীমা ব্রিটেনে ফেরার ব্যাপারে ব্যাগ্রতা প্রকাশ করেছে,কিন্তু আইসিলে যোগ দেয়া যে ভুল তা স্বীকার করে নাই, আইসিলের বর্বর কর্মকাণ্ডের নিন্দাও করে নাই।আইসিল যে মানুষকে জবাই করে সে ব্যাপারে শামীমার মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে, সে উত্তর দেয় যে অনলাইনে এসব জবাইর দৃশ্য দেখেই সে অনুপ্রাণিত হয়েছিল এবং যাদের জবাই করা হয় তারা ইসলামের শত্রু।আইসিল কর্তৃক ইয়াজিদিদের গনহত্যা, দাসত্বে বাধ্য করানো, ইয়াজিদি মেয়েদের ব্যাপক ধর্ষণ সম্পর্কে শামীমার মন্তব্য হচ্ছে যে শিয়ারাও ইয়াজিদিদের সাথে এরকম করে।শামীমা কিছু কিছু ব্রিটিশ মূল্যবোধ তার ভালো লাগে বলে জানিয়েছে।

শামীমার মন্তব্যগুলো এক সূত্রে আনলে আমরা দেখবো যে ১৯৭১ এর জেনোসাইডকে তার মতো অনেকে এবং তাদের গুরুরা জিহাদ বলে স্বীকৃতি দেবে।বাংলাদেশের সংবিধানে মানবিক সমানাধিকার ও অসাম্প্রদায়িকতার যেসব অধ্যাদেশ আছে শামীমার মত আরো অনেকে যে তা সম্মান করে না, তা একেবারে স্পষ্ট।উপমহাদেশে শামীমার মতো অনেক মেয়ে তাদের ধর্ম ভাইদের বিয়ে করে পশ্চিমে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে যে হাত দেয় সে হাত কেটে ফেলে ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠাতে বদ্ধ পরিকর।ব্রিটেনের মত মিশ্র সংস্কৃতির দেশ যেরকম প্রচুর বিত্ত থাকবার পরও শামীমার অভিভাবকদের মতো আরো হাজারো অভিভাবককে ধর্মিও গোঁড়ামির বিপদ সম্পর্কে সচেতন করতে পারে নাই, সেরকম কম বিত্তের দেশ বাংলাদেশে এরই মধ্যে ধর্মিও চরমপন্থি মনোভাব সমাজের সব স্তরে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে।শামীমা ও তাদের গুরুরা দুর্বল রাষ্ট্রগুলো যেখানে জীবন যাপনের মান নিচু সেখানে বিভিন্ন উস্কানি দিয়ে গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে সমাজকে ধ্বংস করে দিয়েছে।

ফিলিস্তিনদের নাগরিকত্ব হারানো, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব হারানোর সাথে শামীমার নাগরিকত্ব হারানোকে মেলানো ঠিক হবে না।আজকে বার্মার দিকে তাকান।বৌদ্ধিক রাষ্ট্রের নিতি নির্ধারকেরা সাম্প্রদায়িকতাকে ছাড় দিয়ে যে নাম কা ওয়াস্তে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল  তার দুরবস্থার দিকে তাকিয়ে শিখুন।সাম্প্রদায়িকতাকে নিরন্তর প্রতিরোধ করা গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত।

শামীমা বেগমদের গুরু কারা?কারা এদের ব্রেন ওয়াশ করে?এখানে যদি সরলিকৃতভাবে তেঁতুল হুজুরদের নাম নিয়ে আসেন তাহলে সাম্প্রদায়িকতার ট্রোজান ঘোড়াদের চিনতে পারবেন না।বাংলাদেশের নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিলাতে ঘরে বসে বসে শামীমারা, হোলি আর্টিজানের হত্যাকারীরা অনলাইনে পড়তে পায় জাকির নায়েক, সলিমুল্লাহ খান, ফরহাদ মাঝহার, চৌধুরী ময়েনউদ্দিন, ডক্টর আব্দুল বারিদের নিরন্তর বিষাক্ত সাম্প্রদায়িক খোতবা।এসব খোতবা এই ট্রোজান ঘোড়ারা উপস্থাপন করে মানবাধিকারের নামে, আধ্যাত্মিক উন্নত সমাজের নামে।শামীমারা এদের বিষাক্ততার বলি।

শরিয়ত বয়াতি, রিতা দেওয়ানসহ হাজার হাজার লোকজ শিল্পী এদের প্রতিরোধ করে মাঠ পর্যায়ে, কিন্তু সরকার এদের লোকজ প্রতিরোধ দুর্বল করে দেয় সমাজে, রাষ্ট্রে কাঠামোতে ছড়িয়ে পড়া সাম্প্রদায়িক এজেন্টদের কারসাজিতে।জাকির নায়েক যেরকম সরাসরি সাম্প্রদায়িকতা প্রচার করে, একজন সলিমুল্লাহ খান তার বক্তব্যে সরাসরি সাম্প্রদায়িকতা প্রচার না করে, আত্মঘাতী বোমাবাজকে বলবে শ্রেণী সংগ্রামী, কবি শামসুর রাহমানকে বলবে ইহুদীবাদের এজেন্ট।এর পর জিহাদি জঙ্গিদের হাতে আপনার কেউ নিহত হলো, হাত, পা উড়ে গেলো বা আপনি শামসুর রাহমানের কবিতাকে ভালো পেলেন, আপনাকে তখন শামীমা ও তার বন্ধুরা বলবে ইসলামের শত্রু।তাদের ভেতর যারা নিজেদের প্রবোধ দিচ্ছে যে আমরা ধর্মযোদ্ধা নই, শ্রেণী সংগ্রামী, তারা আপনাকে বলবে প্রতিক্রিয়াশীল।শামীমার নাগরিকত্ব যেরকম ব্রিটিশ সরকার বাতিল করে দিয়েছে, সেরকম সাংবিধানিকভাবে দেশি ট্রোজান ঘোড়াদের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব বাতিল করে দেয়া উচিত।

ট্রোজান ঘোড়ারা যদি আমাদের মানবতাবোধকে ব্ল্যাকমেইল করতে চায়, তাহলে তা্রা সিরিয়া ও ইরাকের শরণার্থী শিবিরে গিয়ে শামীমার মতো ইডিয়েট ঘোটকীগুলোর সাথে হারেম পাতুক।জাতিসংঘের লঙ্গরে খাক।নাগরিকত্ব তাদের সাজে না, কারণ অন্য নাগরিকদের সাথে সহাবস্থানে তারা উৎসাহিত নয়।


তৃণা রাব্বানি

১/০৩/২১