।।ফারেহা জেবা।।
![]() |
।।দর্শক এবং স্থাপনা মিলেমিশে একাকার।। |
প্রকৃতিও পরিবেশকে অগ্রাহ্য করা অসম্ভব। বিপুল বিস্ময়ের এই প্রকৃতি প্রতিদিন আমাদের মুগ্ধ করে, আচ্ছন্ন করে। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। এর পাশাপাশি সমাজে, আশেপাশে, যা কিছু ঘটে, খবর-নেট-টেলিভিশন এ বিশ্বের যা কিছু দেখি আর শুনি- সবকিছুই কোন না কোন ভাবে আমায় প্রভাবিত করে। তবে বিশেষভাবে আমাকে নাড়া দেয়, নারীর সামাজিক অবস্থান বা তার অন্তর্দহন, সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক ঘটনা, কখনো বা আমার বাগান থেকে পাওয়া ফুল, বীজ ইত্যাদি।
![]() |
।।শিল্পী কাজ করছেন তার স্থাপনায়।। |
আমার কাজগুলো কে আমি বলি, আমার প্রতিদিনের রোজনামচা। বলা যেতে পারে আমার শিল্পকর্ম মানুষ ও প্রকৃতির মাঝে মেলবন্ধন। সব সময় চেষ্টা করি নতুন মাধ্যমে, নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করতে। সমসাময়িক শিল্পকর্ম আমাকে ভীষণ আকৃষ্ট করে এবং অনুপ্রাণিত করে।
সভ্যতার সূচনাকাল থেকেই মানুষ পানি , বীজ, খাদ্যশস্য এবং মূল্যবান বস্তু মৃৎপাত্রে রাখতো। কোন কোন জায়গায় বর্তমানেও মরদেহের ভস্ম মৃৎপাত্রে রাখার রেওয়াজ আছে । আমার দৃষ্টিতে নারী-জঠরের সাথে মৃৎপাত্রের একটা মিল পাই। এই যুগে ও পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় একজন নারীর মাথা তুলে বেঁচে থাকার যুদ্ধ, প্রতিনিয়ত তার মনস্তাত্ত্বিক ও শারীরিক যে দ্বন্দ্ব চলে তা আমাকে ভিষন আলোড়িত করে।
এই স্তাপনা শিল্পে আমি প্রতিটি নারীর শক্তি, অন্তর্দহন ও একাকীত্ব একটা বিশাল আকারের পাতে বয়ান করার চেষ্টা করেছি। একজন নারী তার প্রিয়জনদের জন্য তার সারাজীবন উৎসর্গ করে দেয়। দিন শেষে এত ত্যাগের বিনিময়ে সে শুধু শূন্যতা এবং একাকীত্বের বোঝা বয়ে বেড়ায়। পাওয়ার ঝুলিটা শূন্যই থেকে যায়।
প্রসূতির জরায়ূতে একটা জীবনের জন্ম এবং প্রতিদিন তার বেড়ে উঠা, আমাকে অভিভূত করে। দর্শকরা যখন এই স্হাপনা শিল্পের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাবেন, তখন তারা অনুধাবন করতে পারবেন একজন নারীর প্রতিদিনের অব্যক্ত কথা গুলো। দর্শকরা যেন যাওয়ার সময় একটা অন্যরকম অনুভূতি ও নিজস্ব একটা অভিজ্ঞতা নিয়ে যেতে পারে এটাই আমার লক্ষ্য।
মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম দেশীয় ও সহজলভ্য উপাদান। যেমন কাগজ, পাটের সুতা দিয়ে বোনা বিভিন্ন আকার, ডিজিটাল প্রিন্ট, তারের কাঠামো ইত্যাদি। বিভিন্ন আকারের নারীর দেহের গঠন গুলোতে ভিন্ন মাত্রা আনতে কাগজের প্রতিটা পরতে, আমার বাগান থেকে আহরিত ফূল, পাতা ও বীজ সেটে দেই। এতে এই কাজটিতে একটা ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়। এতে প্রতিটি নারীর অবয়বগুলোতে তাদের মৌলিকত্ব ও মানসিক দ্বন্দ্বগুলো প্রকাশ করতে চেয়েছি।
আলো ও ছায়ার ব্যবহার এমন ভাবে করেছি যাতে এই স্থাপনা শিল্পটি গতিশীল ও ছন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি করে। দর্শকরাও যেন এর একটি অংশ হয়ে যায়। দর্শকদের খুব ভালো সাড়া পেয়েছিলাম। দর্শক এবং স্থাপনাটি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। স্থাপনাটি ঘিরে শিশুদের আনন্দ আমকে অভিভূত করেছে। তারা স্হাপনাটির ভেতর খেলা করেছে, প্রতিটি উপাদান মনযোগ দিয়ে দেখেছে।
।।ফারেহা জেবা।।
![]() |
।।স্থাপনা শিল্পটি প্রদর্শিত হয়েছিল, ২৫তম জাতীয় শিল্পকলা প্রদর্শনী, জাতীয় শিল্পকলা একাডেমী ঢাকা।। |