ফ্রান্সে প্রকাশিত বাংলা ওয়েবজিন। প্রকাশক : প্যাট্রিসিয়া গিদাস, ভ্যান, ৫৬০০০, ব্রিটানি, ফ্রান্স। সম্পাদক : নাসরিন-জয়া হক, চয়ন খায়রুল হাবিব। Contact : choygypsy@yahoo.com

Tuesday, October 10, 2023

আমার দেহ, আমার কথা ২

।।তরঙ্গ  ভার্চুয়াল একক চিত্র প্রদর্শনী।।

।।প্রসেনজিৎ কুমার সাহা।।

।।অন্ধ জীবন সিরিজ।।

'আমার দেহ, আমার কথা'  শিরোনামে তরঙ্গ শুরু করেছিল তরুণ শিল্পীদের অবয়বধর্মি অনুশীলনের কিউরেটিং। যার অংশ হিসেবে এলো আত্মজৈবনিক, স্বিকারোক্তিমূলক ঘরানার উন্মোচন।  আঁকাআঁকির এ-ঘরানা ভারতে বিকশিত হয়েছে গুলাম শেখ, ভূপেন খাখার, নলিনী মালানীর হাতে। বাংলাদেশে এ-ঘরানাতে রাজনৈতিক স্যাটায়ার যোগ করেছে শিশির ভট্টাচার্য। বাংলাদেশের সাহিত্যে আত্মজৈবনিক, স্বীকারোক্তিমূলক ঘরানার বহুমাত্রিক বিকাশ ঘটে আশির কবিদের হাতে। বাংলাদেশে যখন বিমূর্ত চিত্রের রমরমা চলছে, তখন তরুণ শিল্পীদের চর্চায় মূর্ত, আত্মজৈবনিক ঘরানার সম্প্রসারণ খোঁজ করতে গিয়ে 'তরঙ্গ' চিহ্নিত করে প্রসেনজিৎ কুমার সাহার কাজ। প্রসেনজিৎ-এর নিজের ভাষ্যে, তার কাজ উপস্থাপিত হলো এখানে। সম্পাদক, তরঙ্গ।
 
তিক্ত অভিজ্ঞতা সিরিজ

প্রসেনজিৎ কুমার সাহা : আমার কাছে কাজের থেকে উদ্দেশ্য বড়। ছবি আকা তেমন গুরুত্বপূর্ণ না, তবে ছবি নির্মানের আগে যে অনুভূতি পাই সেটা বেশ মজা লাগে। যেহেতু 'উদ্দেশ্য' শব্দ ব্যাবহার করেছি তাহলে বলতেই হবে ছবির মধ্যে রং এর প্রয়োগ উদ্দেশ্যমূলক, যা আমার প্রতিদিনের যাপন কে উপভোগ করার মধ্য দিয়ে এসেছে।

অবচেতনার রাজনৈতিক কাঠামো সিরিজ

সত্য কথা বলতে ছবি আকার উপর আমার আগ্রহ কম, যার জন্য প্রায় বহুদিন পর পর কাজ করি যখন দেখি ভার বেশি পরে যায় হজম হয় না তখন সেটাকে উগ্রে দেই, একটা মজার ব্যাপার হল ওই যে বললাম উদ্দেশ্য আছে কিন্তু তা কতটা বাস্তবিক আর কতটা বাস্তবিক না সেটা তেমন জরুরী না আমি নিজেই আবার উদ্দেশ্যহীন হয়ে থাকার চেষ্টা করি তাই কোন কিছুই জরুরী বা গুরুত্বপূর্ণ না আমার কাছে।  এই যেমন সুকুমার রায় এর ছড়া গুলো পড়লে একধরণের অ্যাবসার্ড অনুভূতি পাওয়া যায়, আমার ছবির ব্যাপার গুলো অনেকাংশে অ্যাবসার্ড, আবার ছবির চরিত্রগুলোকে খুব ইন্টারেস্টিং করে সাজাই। সবটাই মূলত একটা ঘটনার আইকনিক ধারাবাহিকতা।

তিক্ত অভিজ্ঞতা সিরিজ

 আমার কাজে ফিগার খুব বেশি প্রাধান্য পায় এবং তার সাথে ব্যাকগ্রাউন্ড, রং, রেখা। যদিও ফিগারের উপর আমার এক ধরণের ফ্যাসিনেশন আছে যার প্রধান ইন্ধন দাতা ছিল মাইকেল এঞ্জেলোর কাজ।  আমি যখন সেকেন্ড ইয়ারে পরি তখন মাইকেলের ফিগার পেইন্টিং এর উপর দুর্বল ছিলাম তার করা ড্রইং অনেক বেশি মাত্রায় কপি করতাম এক ধরণের ফ্যান্টাসিও ছিল এ নিয়ে। হঠাৎ করে এই জায়গা ভেঙে দেয় আমার শিক্ষক, ইমাম হোসেন সুমন স্যার। আমাকে ডেকে বলেছিলেন 'কেন আমি এই কাজ গুলো করি আবেগ দিয়ে? সেটা দক্ষতা বাড়াবার জন্য নয় কেন..?  কি চাই আমি..!'  তার প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলাম 'আমিও মাইকেলেঞ্জেলোর  মত হতে চাই, একজন ঈশ্বর হতে চাই, যে উপাধি সে লাভ করেছিল তেমন।' এই কথা শুনে স্যার বললেন, 'এক থাপ্পড় মারব তোকে।' ঠিক তারপর থেকে আমার দেখা, চিন্তা ভাবনার মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন চলে আসে। তখন থেকে আমি আবেগ দিয়ে নয়, আগে বাস্তবিক জায়গা থেকে শিল্পীদের কাজ গুলো দেখলাম, ছবি বিশ্লেষণ করা শিখলাম  এবং সেই সময় থেকেই আমার নতুন যাত্রা শুরু হয় দুই এক বছরের জন্য।

অবচেতন অস্তিত্ব সিরিজ

তারপর আবারো এক ধাক্কা আমার জীবনকে এক বিশাল পরিবর্তনের মধ্যে ফেলে দেয়, খুলে যায় দেখার পরিপ্রেক্ষিত চিন্তা করার নতুন এক মাধ্যম।

যদিও আমি বলব না, সেই ধাক্কা ভালো বা খারাপ, শুধু বলব ছবিতে আমি নিজেকে প্রকাশ করার চেষ্টা করি যদিও তা সম্পূর্ণ রূপে হয় না, খানিক অংশ ত গোপন রাখতেই হয় সুবিধার জন্য, যাহোক ভালোই লাগে। একটা সময় পর্যন্ত সবার কাছেই রিজেক্ট হইতাম পরিবার বন্ধু মহল যদিও আমার কোন বন্ধু ছিল না সেই অর্থে তবুও পাত্তা না পাওয়াটাই ছিল আমার ভাগ্য কিন্তু এখন তা হয় না সেই রাজনীতিটা রপ্ত করতে পেরেছি এখন তাই আর সমস্যা হয় না। মাঝে মাঝে বড় একটা সমস্যা এসে হাজির হয় কি আঁকবো?  কি আঁকবো...??  এটা একটা বড় প্রশ্নের সম্মুখীন করে, আসলে এব্যাপারটাও মজা লাগে, একধরণের ক্রাইসিস ত থাকবেই। ক্রাইসিস মজা লাগে, যদি তা না থাকে তাহলে সেটা তৈরি করে নিতে হয়, যদি এটাতে অভ্যস্ত হওয়া যায় তখন এক ধরণের প্লেজার পাওয়া যায়, যা আমি করি।

উদ্ভট সিরিজ

আমি নিজেকে জানার চেষ্টা করি এই ক্রাইসিস গুলো তৈরি করে আর তার ফলে ছবি আকার রসদ ও যোগাড় হয়ে যায়।  আমার ছবির লাইন গুলোই আমার ক্রাইসিস, রং গুলো কাচা মাল। পিংক কালারটা আমার কাছে নারীর মত যে প্রেমিকা মাঝে মাঝে ব্যাকগ্রাউন্ড এ পিংক কালার ঢেলে দেই আর মনে মনে ভাবি আছে সে আমার সাথেই আছে। মজার ব্যাপার হল আমার চিন্তা বা ভাবনার জায়গা প্রথাগত না, তার বিপরীত এবং অ-প্রথাগত যা, তা আমার ছবি গুলোর মধ্যে দেখা যায়।

অন্ধ জীবন সিরিজ 

আমি জীবন কে উপভোগ করি সময় গুলো বেশ আয়েশ করে কাটাই ছবির চরিত্র গুলোর মত করে। একটা সত্য কথা বলি এই সব আর্ট ফার্ট ভালো লাগে না তবুও করা এটাও একটা যাপনের পার্ট। এটাই মনে হয় বিড়ালকে খাঁচা বন্দি করি বা কুমিরকে টিভি দেখতে বসিয়ে দেই, মাঝে মাঝে বিড়ালের লেজ ধরে টেনে দেই, আবার পাশের বাসার মানুষরা কিভাবে যৌন জীবন কাটায় তা উকি দিয়ে দেখি বোঝার চেষ্টা করি তাদের অভিব্যক্তি গুলো আবার ইমাজিনেশন করে দেখি। আমার কাছে লুকোচুরির কোন মানে নেই। সব কিছু অ্যাবসার্ড।

অন্ধ জীবন সিরিজ

চয়ন ভাই বেশ কিছু শিল্পীর কাজ দেখতে দিয়েছিল। তার মধ্যে ভুপেন খাখারের কাজ আমার ভালো লেগেছিল। মনে হয় খাখারের ছবির সাথে আমার কোথাও যেন মিল আছে। থাক এটা ভালো, অনেকেই বলে আমার কাজের মধ্যে স্যারের কাজের প্রভাব আছে। আমি বলবো, থাকাটাই খুব স্বাভাবিক বরং প্রভাব থাকবে না ওটাই অস্বাভাবিক, এটাও সুন্দর অস্বাভাবিক ও খারাপ না। থাকুক, চলুক এ ভাবে, তবে জীবনকে যাপন করা টাই যে আর্ট, এটাই ঠিক, আমি তো এটাই মনে করি। 

ছবি আঁকা যেহেতু একটা ভাষা, তাহলে কি সেটাকে লিখে প্রকাশের আলাদা কোনো প্রয়োজন আছে?  মনে হতে পারে,   ছবি তো নিজেই একটা স্বতন্ত্র ভাষা তৈরি করেছে দেখার ক্ষেত্রে, যদি লিখেই বোঝাতে হয় তাহলে ছবি একে আর  লাভ কি? কিন্তু ছবি এবং শিল্পীর নিজস্ব লেখা একটি পারস্পরিক সেতু তৈরি করতে পারে। রবীন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ, হেমেন্দ্রনাথ, উইলিয়াম ব্লেক, মাইকেলেঞ্জেলো, ভিকটর হুগো তা পেরেছিল।

তিক্ত অভিজ্ঞতা সিরিজ 

সব শেষে আমার এই আত্মজৈবনিক ছবিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছি রং এর ব্যাবহার নিয়ে এবং তার সাথে লাইনগুলো। ওই লাইনের ব্যাবহার ড্রইংগুলোতে বাস্তবিক এক অর্থহীনতার ও নির্লিপ্ততার বোধকে জাগ্রত করে। রং যেমন এখানে খুঁজে পাওয়া বস্তু বা ফাউন্ড-অবজেক্ট হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেই রকম ছবির চরিত্রগুলোকে তেমনি রেডিমেড অবজেক্ট হিসাবে দেখাতে চেয়েছি। সব মিলিয়ে এই কাজগুলো আমার আত্মপোলব্ধিতে এক অ্যাবসার্ড অনুভূতির প্রবহমানতা তৈরি করে।

।।প্রসেনজিৎ কুমার সাহা।।


অন্ধ জীবন সিরিজ

 'আমার দেহ, আমার কথা' শিরোনাম ছাড়া ওপরের টেক্সট ও শিল্প কর্মের সম্পুর্ন স্বত্ব বা কপিরাইট অধিকারী প্রসেনজিৎ কুমার সাহা। সরাসরি অনুমোদন সাপেক্ষে JSRL/জুলেখা সিরাপ রিডার্স লাউঞ্জের সহযোগী প্রকল্প তরঙ্গ ওয়েবজাইনে ব্যাবহার করা হয়েছে। প্রসেনজিৎ কুমার সাহার অনুমোদন ছাড়া পূনমুদ্রণ, অন্যত্র প্রকাশনা, প্রদর্শনী করা যাবে না।

Accept the title , 'Amar Deho, Amar Kotha',  above Text & Art Works Copyright reserved by Tamzid Nawreen Purnee.


কিউরেটর : প্যাট্রিসিয়া গিদাস, নাসরিন-জয়া হক, চয়ন খায়রুল হাবিব।