ফ্রান্সে প্রকাশিত বাংলা ওয়েবজিন। প্রকাশক : প্যাট্রিসিয়া গিদাস, ভ্যান, ৫৬০০০, ব্রিটানি, ফ্রান্স। সম্পাদক : নাসরিন-জয়া হক, চয়ন খায়রুল হাবিব। Contact : choygypsy@yahoo.com

Thursday, November 19, 2020

স্প্রাইট (SPRITE): বজ্রপাতের আরেক বিস্ময়কর রূপ

।।লুৎফর রহমান বাবু।।


বজ্রপাত! এই শব্দটির সাথে আমরা প্রায় সবাই পরিচিত। কিন্তু বজ্রপাতেরও যে প্রকারভেদ আছে আমরা অনেকেই তা জানি না। এরকম এক বজ্রপাত আছে যা Sprite Lightning বা Red Sprite বা শুধু Sprite নামে পরিচিত। SPRITE-এর পরিপূর্ণ রূপ হলো Stratospheric Perturbations Resulting from Intense Thunderstorm Electrification।

স্প্রাইট হলো প্রচন্ড সব ঝড়ের বজ্রমেঘের সরাসরি উপরে বায়ুমন্ডলের উপরের স্তরে সৃষ্ট বিদ্যুতের একটি লাল ঝলক বা ফ্লাশ। স্বাভাবিক বজ্রপাতকে আমরা বজ্রমেঘ থেকে নিচের দিকে ভূমিতে নামতে দেখি, কিন্তু স্প্রাইটস ঠিক ঐ সময়েই লাফিয়ে বিপরীত দিকে অর্থাৎ সরাসরি উপরের দিকে সৃষ্ট হয়। স্প্রাইটসগুলি ভূপৃষ্ঠ থেকে ৯০ কিলোমিটার বা তদুর্ধে মহাকাশের দিকে ছুটে যায়। স্প্রাইট উজ্জ্বল লাল রঙের হয় বলে এদেরকে রেড স্প্রাইট বলে। বায়ুমন্ডলের নাইট্রোজেনের সাথে স্প্রইটের মিথোস্ক্রিয়ায় এর রং লাল হয়।

অষ্টাদশ, উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর কয়েকজন গবেষক তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তিতে বজ্রমেঘের উপরে ঊর্ধাকাশে স্প্রাইটজাতীয় ঘটনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে স্প্রাইট সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত হয় ঘটনাক্রমে, ১৯৮৯ সালে। মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ জন উইংক্লার ও তার সহকারী গবেষকগণ একটি স্পেস শাটলের রেকর্ডকৃত ভিডিও ফুটেজ পরীক্ষাকালে আকস্মিকভাবে প্রথম স্প্রাইট সনাক্ত করেন। পরবর্তীতে স্প্রাইের বহু আলোকচিত্র ও চলচিত্র রেকর্ড করা হয়।

স্প্রাইট দেখতে অনেকটা জেলিফিসের মত, কখনো গাজরের মত। ভূমিতে যে স্থানে বজ্রপাত হয় সেখান থেকে বজ্রমেঘের যে উচ্চতা, স্প্রাইটকে দেখা যায় বজ্রমেঘ থেক তার প্রায় তিনগুন উপরে। স্প্রাইটের স্থায়িত্ব খুবই কম –এক সেকেন্ড বা তারও কম। তাই স্প্রাইটের স্থির ছবি তোলা দুরুহ একটি কাজ। ছবি বা ভিডিও ধারণ করতে গেলে প্রথমেই পর্যবেক্ষণের সঠিক জ্যামিতিটা নির্ধারণ করে নিতে হয়। এক্ষেত্রে রাডার ওয়েদার ম্যাপ বেশ সহায়ক হয়। যে স্থানে টর্ণেডো বা ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায় সেই স্থান হতে অনেক দূরে (প্রায় শতাধিক মাইল দূরে) পর্যবেক্ষক বা চিত্রগ্রাহককে অবস্থান নিতে হয়। উচ্চগতিসম্পন্ন ভিডিওতে এর গতি প্রকৃতি বেশ স্পষ্টই ধরা পড়ে। তবে দিনের বেলায় উজ্জ্বল সূর্যালোকে স্প্রাইট প্রায় দেখাই যায় না, তাই রাতই উপযুক্ত সময়।

বসন্তের শেষ হতে গ্রীষ্মের থেকে শেষ পর্যন্ত সময়টা প্রচন্ড শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের সময়। এই সময়ের ঝড়গুলিত স্প্রাইট বেশী দেখা যায়। এই পর্যন্ত যত স্প্রাইটের ছবি ধারণ করা হয়েছে তার বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণপূর্ব এলাকা ও দক্ষিণ আমেরিকা কিছু এলাকার। বাংলাদেশের কালবৈশাখী ঝড়ের সময়ও স্প্রাইট দেখা যাওয়ার কথা, কিন্তু ঝড়ের কয়েক ঘন্টা আগেও টার্গেট এরিয়ার সঠিক পূর্বাভাস না পাওয়ায় কাজটি কর খুবই কঠিন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হতো যদি রিয়েল টাইম রাডার ওয়েদার ম্যাপ পাওয়া যেতো। তাহলে অনুসন্ধিৎসু চিত্রগ্রহকের পক্ষে কাজটি করা অনেকটা সহজ হতো।

লুৎফর রহমান বাবু
২৫/০৪/২০
ঢাকা