ফ্রান্সে প্রকাশিত বাংলা ওয়েবজিন। প্রকাশক : প্যাট্রিসিয়া গিদাস, ভ্যান, ৫৬০০০, ব্রিটানি, ফ্রান্স। সম্পাদক : নাসরিন-জয়া হক, চয়ন খায়রুল হাবিব। Contact : choygypsy@yahoo.com

Wednesday, November 18, 2020

চায়ের লিকার-আমার মাধ্যম

।।টুটুল আহমেদ।।


ছোটবেলার কাপড়ে দাগ। দাগগুলো কথা বলে। প্রত্যেকটা দাগ, কিছু না কিছু বলে। পেস্টের ফিকে সবুজ দাগ, চায়ের খয়েরী দাগ, কলমের কালো নীল কালি দাগ প্রতিটা দাগের মধ্যে এক-একটা মানচিত্র লুকিয়ে আছে।
না বলা কথার মানচিত্র…

ছোটবেলা থেকেই দাগগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতাম। আর মনে হতো, ওরা কী জানি বলছে। কী বলছে ওরা? ভাবতে গেলে উঠে আসতো অবচেতনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা ইচ্ছেগুলো। কেউ যেন ওদের মুখগুলো আটকে রেখেছে।
বলার ভাষা হারিয়ে শেষে দাগ হয়ে ফুঁটে উঠেছে। সব দাগের মধ্যে চায়ের খয়েরি রঙের দাগটার ভেতর একটা আলাদা রোমান্টিকতা কাজ করতো।

মনের ভেতর মরে যাওয়া কামনা বাসনার চিহ্ন মনে হতো ওদের।
কিছু বলবার জন্য ছটফট করতে করতে দাগ হয়ে মরে গেছে ওরা। সেগুলো নিয়ে ভাবতে গিয়ে ভেসে উঠতো কত দৃশ্য। যেগুলো সত্যি হতে পারতো। কিন্তু হয় নি।
দাগের ভেতর জমে থাকা কথাগুলোর খোজে আমি চলে যেতাম কল্পনার জগতে।
এই দাগের পেছনে না বলতে পারা কথার মধ্যে যে ছবি আছে, সেই ছবি আঁকা যেতে পারে।

এই ভাবনা থেকে 2004 সালে National Biennale এর জন্য চায়ের লিকার দিয়ে একটি ছবি আঁকি। প্রদর্শনীর সেরা দশটি আলোচিত ছবির একটি হয়ে ওঠে এটি। এটা আমার জন্য অনুপ্রেরণার ছিল। এর পরে ১৬ বছর ধরে এই মাধ্যমটি নিয়ে কাজ করতে করতে বিভিন্ন ঘনত্বের চায়ের লিকার দিয়ে যে
এক রঙের ভেতর বহুবর্ণ নিয়ে খেলা যায় তাকে উপভোগ করেছি। চায়ের ফোঁটার ভেতর যে বিন্দুর ঘনত্ব, সেই বিন্দুগুলো আর সেই বিন্দুগলো যে পরপরপর বসে যে রেখা তৈরি করে তার বিন্যাসের ভেতর যে অনেক কথা বলা যাচ্ছে, সেটা আবিষ্কার করেছি। কী কথা?

মানুষের কথা। যে মানুষ মানুষ হয়ে উঠতে চায়। যে কথা প্রকৃতি হয়ে আমাদের প্রকৃত মানুষের কাছে নিয়ে চলে । আর সে কথাগুলো যেন শুধু ধর্মকথায় আটকে থাকে না। ধর্মবোধের মতো স্বচ্ছ হয়ে প্রকাশিত হয়
কথাগুলো সচেতন বানানো কথা নয়, অবচেতনের না বলা সত্যকথার মতোন। যে প্রাণময় গল্পগুলো জন্ম হয়েছিল, জীবনেরই ভেতর। প্রকৃতি হয়ে।
তারপর মিলিয়ে গেছে। তারপরও হারিয়ে যায় নি। থেকে গেছে। দাগ হয়ে…চায়ের দাগ। না বলা কথার কথা। স্নিগ্ধ। পবিত্র। সত্য।

টুটুল আহমেদ
২৭/১০/২০
ঢাকা


পেইন্টিং, টুটুল আহমেদ