ফ্রান্সে প্রকাশিত বাংলা ওয়েবজিন। প্রকাশক : প্যাট্রিসিয়া গিদাস, ভ্যান, ৫৬০০০, ব্রিটানি, ফ্রান্স। সম্পাদক : নাসরিন-জয়া হক, চয়ন খায়রুল হাবিব। Contact : choygypsy@yahoo.com

Saturday, November 21, 2020

চন্দ্রকণা স্মরণ

।।বাবলী হক।। সুমী সিকানদার।।

চন্দ্রকণা, তৈয়বা সুলতানা কণা

কয়েক লাইন লিখে, নীচে ছোটো করে লিখত, –চন্দ্রকণা। "মানসিক সুখে ধ্যান দিবে মানুষ। বিশুদ্ধ মানব জাতির জন্ম নিবে এই গ্রহে।"..... চন্দ্রকণা, তৈয়বা সুলতানা কণা, আমার বোনের মেয়ে ব্রেইন স্ট্রোকে চলে গেল ৪ই এপ্রিল ২০২০।

লক ডাউনের দিনগুলিতে লিখতে শুরু করেছিল 'সেল্ফ কোয়ারান্টাইন নোট বুক'। প্রতিদিন কয়েক লাইন করে লিখত, ফেইসবুকে মনের কথা। ৩৬ পর্ব লেখার পর আর লিখে নাই। কেন যেন হঠাৎ করেই লেখা বন্ধ করে দিল মৃত্যুর সাতদিন আগে। আতঙ্ক ও উৎন্ঠায় থাকত। দুশ্চিন্তা করত সাত বছরের ছেলে ওয়াসিক ও মাকে নিয়ে। ৬ই এপ্রিল লিখেছিল,
'এক পা দুই পা করে করে করোনা প্রত্যেকের পাশের দরজায় এসে কড়া নাড়ছে।'

কণা কি তার নিজের ঘরের কড়া নাড়ার শব্দ শুনতে পেয়েছিল? নইলে কেন লিখেছিল–
'কেবল মনে হচ্ছে, মৃত্যু অবস্বম্ভাবী জেনেও মৃত্যু যে একটি ভয়ের নাম তা আজ আমরা প্রায় সকলেই অনুধাবন করছি। অথচ এই মৃত্যু করোণা ভাইরাস ছাড়া ও যে কোন সময় যে কারো ঘটতে পারে তা আমরা এই মুহূর্তে ভুলে বসে আছি।''
ভাবনা ছিল, আর কি আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারব নাকি এটা মেনে নিয়ে পথ চলতে হবে বহুদিন। মৃত্যু ঝুকি নিয়েই বাঁচতে হবে প্রতিদিন।
প্রতিদিনের এই ভাবনা থেকে আজ অনেক দূরে চলে গিয়েছে কণা!

কণা তার দিনলিপিতে লিখেছিল,
“করোণার স্পর্শে আজ ভালোবাসা বিপন্ন হতে চলেছে। মানুষ মানুষকে স্পর্শ করছে না। করোণা নয় ভালোবাসা যুক্ত স্পর্শের অভাবে মানবজাতির ভালোবাসার যে সংকট দেখা দিবে তা ভাবনার বিষয়।”

কণার কাছের বন্ধু কবি সুমী সিকানদার। কণাকে নিয়ে লেখা তার এই পোস্টটি শেয়ার করলাম।
"যেতে তো হবে জানি। কিন্তু যদি অকালে বন্ধু চলে যায় এই ট্রমা নেয়া যায় না। আদমজী ক্যান্ট এর ক্লাসমেইট তৈয়বা সুলতানা কণা গত ৩ তারিখ ইফতারের পর ভালো লাগছে না বলতে বলতে অজ্ঞান হয়ে গেল। করোনা কালে তার জন্য এম্বুলেন্স আসতে আসতে দেরী হলো। রাত সাড়ে বারোটায় সে ব্রেইন স্ট্রোক করে মারা গেল। সব শেষ। রেখে গেলো ৭ বছরের ছেলে। মা খুঁজে খুঁজে এই শিশুটি এক এক মূহুর্ত পার করবে। আমি কত চেষ্টা করছি একটু সামলাতে কিন্তু পারছিনা।

আমাদের কলেজের প্রথম রিইউনিয়নে আমি অনুষ্ঠান আয়োজনে তাকে আবৃত্তির জন্য সিলেক্ট করলাম কমিটির বাকি বন্ধুদের নিয়ে। তাকে বাছা বাছা কবির কবিতা আবৃত্তি করতে বললাম সে বললো দোস্ত তোর একটা কবিতাও পড়তে চাই। সেই কারণে বাসায় চলে এলো আমাকে একটু আবৃত্তি শোনাতে দুজনে কবিতা আড্ডা গল্প। অনুষ্ঠানে চমৎকার পড়ল সে। আমি বিনা কারণে তার হার্দিক ভালবাসা পেয়েছি।
তার লেখার গুণ , বন্ধুবাৎসল্য, শিক্ষক হিসেবে বলিষ্ঠতা এবং সাদা দাঁতের হাসি বড় সুন্দর।

সব রেখে যে চলে গেলি। আমার সাথে যে কফি খেতে চেয়েছিলি দোস্ত। তোর দুইটা হাতে ধরি, আমাকে মাফ করে দিস সময় দিতে পারলাম না। জীবনটা এত ছোট কণা............"


বাবলী হক/সুমী সিকান্দার
৫/০৫/২০
ঢাকা