ফ্রান্সে প্রকাশিত বাংলা ওয়েবজিন। প্রকাশক : প্যাট্রিসিয়া গিদাস, ভ্যান, ৫৬০০০, ব্রিটানি, ফ্রান্স। সম্পাদক : নাসরিন-জয়া হক, চয়ন খায়রুল হাবিব। Contact : choygypsy@yahoo.com

Friday, September 15, 2023

রাইনার মারিয়া রিলকের কবিতা

।।অনুবাদ : খায়রুল আলম চৌধুরী।।


হেমন্ত দিন
HERBSTTAG

(গ্রীষ্মের পর হেমন্তকে বরণ, নতুনকে আমন্ত্রণ আর আটপৌরে জীবন থেকে বাইরে যাবার একটা ডাক আছে এ কবিতায়। নি:সঙ্গতার একটা কান্তিময় বিষাদও ছড়িয়ে আছে ছন্দের দোলায়।) প্রভূ, সময় হল। হয়েছে দীর্ঘ গ্রীষ্মবসান। সূর্যঘড়িটা এবার ঢেকে দাও তোমার ছায়ায়, খোলা হাওয়ায় আজ তবে ভরে যাক বাগান। আদেশ কর যেন শেষ ফলগুলো পেকে যায়; তাদের দাও আরো কটা দখিনা দিন, করে দাও তাদের রূপ-রসে রঙিন, ঢেলে দাও শেষ মধু তোমার ভারি মদিরায়। আর কখনো ঘর হবে না তার, এখনো হয়নি যার। একাই থেকে যাবে সে, এখনো একা আছে যে, হায়, বসে থাকবে, পড়বে, আর লিখবে লম্বা চিঠি সন্ধ্যায়, ঘুরে ফিরবে রাজপথের এ-মাথা ও-মাথা, দুনির্বার, শুকনো পাতারা যখন উড়ছে হাওয়ায় হাওয়ায়।

শোক
LAMENT

সবকিছু সেই কবে আর কত দূরে চলে গেছে। মাথার ওপর জ্বলছে যে তারা নিযুত বছর আগে বোধ করি মরে গেছে সে। পাশ দিয়ে চলে গেল যে নৌকা তার ভিতর থেকে যেন ভয়ের গুন্জন শুনেছি আমি। ঘরের ভিতর বেজে উঠেছে ঘড়ির কাঁটার শব্দ… কোন সে ঘর? হৃদয়ের ভিতর থেকে বের হয়ে আমি বিশাল আকাশের নিচে হাঁটতে চাই। আমি প্রার্থনা করতে চাই। অনেক দিন আগে মরে যাওয়া নক্ষত্রদের মধ্যে এখনো নিশ্চিত বেঁচে আছে একটি। আমার মনে হয় আমি জানি কোন সে নিঃসঙ্গ তারা— এখনো টিকে আছে আকাশের আলোরেখার শেষ কিনারে শাদা শহরের মতো…


সন্ধ্যা
ABEND

(১৯০২-১৯০৬ এ লেখা ‘দ্য বুক অব পিকচার্স’ এর ‘সন্ধ্যা’ কবিতাটি রিলকের মৃত্যুভাবনা বিষয়ক অন্যতম একটি কবিতা।) ধীরে ধীরে প্রাচীন বনবিথীর চূড়োয় রাখা নীল জামা পরে নিচ্ছে সন্ধ্যা; তুমি দেখছো: দুভাগ হয়ে যাচ্ছে মাটি, একভাগ যাচ্ছে স্বর্গের দিকে, আরেকভাগ যাচ্ছে তলিয়ে; তুমি রয়ে গেছো, কারো তুমি নও, নও নীরব বাড়িটার মতো স্থির আর অন্ধকারময়, নেই অনন্তের মমতাময় আহবান, যা প্রতি রাতে নক্ষত্র হয়ে উঠে যায় উপরে— তুমি রয়ে গেছো (অব্যক্ত অবগুন্ঠিত) তোমার জীবনে, এর বিশালতা আর ভয় নিয়ে, যেন এই সসীম, এই অমেয়, একবার পাথর, নক্ষত্র আবার

বুক অব আওয়ারস, ১৫৯

আমাদের সৃষ্টি করতে-করতে ঈশ্বর আমাদের প্রত্যেকের সাথে কথা বলেন, তারপর রাতের বেলায় আমাদের সাথে নীরবে হাঁটেন। খুব মৃদুভাবে তখন এ কথাগুলো শুনতে পাই আমরা: তোমাকে পাঠাচ্ছি তোমার স্মৃতি থেকে ছাড়িয়ে, তোমার আকাঙ্খার সীমান্ত স্পর্শ করো তুমি। আমাকে মূর্ত করো। জ্বলে ওঠো শিখার মতো সৃষ্টি করো বিরাট ছায়া, আমি যেন সেখানে আসতে পারি। সৌন্দর্য ও সন্ত্রাস: সবকিছুর স্বাদ তুমি পাও। শুধু চালিয়ে যাও। কোনো অভিজ্ঞতাই চূড়ান্ত নয়। আমাকে হারিয়ে ফেলো না কখনো। কাছেই আছে এক দেশ, সবাই যাকে বলে জীবন। দার্ঢ্যতা দেখে তাকে চিনতে পারবে তুমি। আমার দিকে বাড়াও তোমার হাত।

মূল : রাইনার মারিয়া রিলকে।
অনুবাদ : খায়রুল আলম চৌধুরী।

Cover 1 :
Portrait drawing of Rainer Maria Rilke (4 December 1875, Praag - 29 December 1926, Montreux) by Leonid Pasternak.

Cover 2 :
Title ; Les Roses(bk by Rainer Maria Rilke w/25 works and title + separate suite, 1 TP, and 2 drawings).By Imre Reiner(Hungarian 1900-1987).