ফ্রান্সে প্রকাশিত বাংলা ওয়েবজিন। প্রকাশক : প্যাট্রিসিয়া গিদাস, ভ্যান, ৫৬০০০, ব্রিটানি, ফ্রান্স। সম্পাদক : নাসরিন-জয়া হক, চয়ন খায়রুল হাবিব। Contact : choygypsy@yahoo.com

Friday, September 15, 2023

অনিকেত শামীমের কবিতাগুচ্ছ

।।অনিকেত শামীম।।



উত্তর
আধুনিক

এই বোধের অতীত তুমি কীভাবে পৌঁছুবে

সমস্ত কোলাহল থেমে যায় এই উপান্তে...

ডিকন্সট্রাকশন ধারায়

সত্তার গভীরে যেতে যেতে

যেতে যেতে

এলিয়েনেশন উদ্বেগ তাড়া করে

সত্তার গভীরে অনুরণন বাজে দিগ¦লয়

মগজের কোষে কোষে

শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে

 

তুমি কীভাবে ফেরাবে এই সমূহপতন

তুমি কীভাবে পাঠ নেবে সভ্যতার বিমানবিকীকরণ

জটিল বিন্যাসে আজ বিবর্তিত সুরলহরি

স্তব্ধ বিবেক ছায়া ফেলে শাদা আয়নায়

মানুষ, চির রহস্যময় মানুষ

তোমার ঘূর্ণায়মান বৃত্তে বিনাশী আয়োজন

রহস্যঘেরা জটিল বৃত্তে হা-হুতাশ

তুমি কীভাবে ভেদ করবে অনঙ্গ রহস্য

বোধের গভীরে আছে কী কোনো চাবিমাস্টার?

 

এই নাও দ্রাক্ষারস

কেলাসন প্রক্রিয়ায় শুদ্ধ হোক মেধা মনন

যাবতীয় জাগতিক উপচার থেমে যায় এই উপান্তে 

বোধের অতীত যা কিছু থাকে

সে আমি।


নিরুদ্দেশ যাত্রীর খোঁজে

 

একটি ট্রেন প্রতিদিন হুইসেল বাজিয়ে

                  প্রতিদিন হুইসেল বাজিয়ে চলে যায়

হুইসেলের শব্দ শোনে প্রতিদিন অনড় দাঁড়িয়ে থাকি

                                 প্রতিদিন অনড় দাঁড়িয়ে থাকি শস্যখেতে

 

সবকিছু খানখান ভেঙেচুরে লোপাট

এক খুঁটি থেকে আরেক খুঁটিÑ তারগুলো উথাল-পাথাল

জমির আইলগুলো দিকচক্রবাল

আর ভাবনার বিন্যাস মাকড়শা জাল বুনে বুনে

দিগি¦দিক ছুটে চলে

 

একটি ট্রেন প্রতিদিন হুইসেল বাজিয়ে

                  প্রতিদিন হুইসেল বাজিয়ে চলে যায় নিরুদ্দেশ ঠিকানায়

যাত্রী নেই কোনো তুমি ছাড়া

                           তুমি ছাড়া কোনো যাত্রী নেই নিরুদ্দেশ ট্রেনে

 

দিগন্ত বিস্তৃত শস্যখেতে দাঁড়িয়ে

প্রতিদিন একটি ট্রেনের চলে যাওয়া দেখি

 

ট্রেনের একমাত্র যাত্রীর ভাবনা-বিন্যাস অনুবাদ করি নিজস্ব ভাষায়

 

সোমপুর বিহারের বালিকা

রোদ্র-খরতাপে লুপ্ত ঐতিহ্য খুঁজতে খুঁজতে আমাদের মনে পড়ে নালন্দার ইতিহাস আর তখন তিথীর দূরত্বের কথা ভুলে গিয়ে আবিষ্কার করি সোমপুর বিহারের বালিকা এইতো সামনে দাঁড়িয়ে... হাজার বছরের বালিকা-শরীর স্পর্শাকাক্সক্ষায় আমরা উন্মুখ, অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না ভাবনা বাতিল করে আলো দেখার উৎফুল্লতায় মেতে উঠি --

 

মনে পড়ে বিদর্ভ নগরের কথা

হরপ্পা-মহেঞ্জোদারোর বোন আমাদের এই সোমপুর

ঐতো বৌদ্ধভিক্ষুরা করিতেছে জ্ঞান বিতরণ

আমরা শিশুগণ মন দিই নিজ নিজ পাঠে

পাঠ নিই সভ্যতার

পাঠ নিই বিমানবিকীকরণের


তুমুল ভাঙনের শব্দে নিদ্রাসমগ্র থেকে পুনর্বার জেগে উঠি আমরা... আমাদের অস্তিত্বে খেলা করে বোবা সময় আর বোবা সময়ের সুতো বেয়ে মনে পড়ে নীল উপাখ্যান... তখন কাৎলাহারের বিল থেকে ভেসে আসা পূর্বপুরুষের দ্রোহী আত্মার গর্জন আমাদের সন্যাসী করে... আমরা ক্রমশঃ চিরায়ত বাংলার দ্রোহের আগুনে জ্বলে উঠি, পাঠ নিই বিদ্রোহের আর পাহাড়পুরের বালিকা আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকে...

কোথাও নেই আমি


আমি যাইনি তোমাদের বসন্ত উৎসবে

তবুও আমাকে নিয়ে তোমাদের আনন্দ উল্লাস

সবাই জেনে গেছে,

আর হলুদ লাল পাখিসব

আমার অশরীরী বুকে নৃত্যঢেউয়ের মুদ্রায় মাতোয়ারা।

তোমাদের কিছুই দিতে পারিনি আমি

না প্রেম                        না ঘৃণা

আমি  অধরা...

বসন্ত বন্দনায়ও পাবে না আমাকে

ভালোবাসার দরোজায় অনর্গল কড়া নেড়ে

আমি ফেরি করি ঘৃণার অনল।

পাবে না আমাকে

দূরে, পাহাড়ের ওপারে

দিগন্ত বিস্তৃত সামিয়ানা টানিয়ে

আয়োজন করেছি কবিতা উৎসব

আমার একক কবিতাপাঠ

আমিই একমাত্র শ্রোতা।


প্রচ্ছায়া

 অন্ধকারে শুয়ে আছে নিদ্রাহীন মাকড়সা

 

পলাতক খেলা খেলে কতদূর যাওয়া যায়

জানে না বোবা মাছ, মাছি মাকড়সা

ডাইনিং টেবিল

মৃত মাছের তাকিয়ে থাকা অপলক চোখ

হান্ড্রেড পাওয়ারের বেলকো বাল্ব

স্ফটিক জলে পুচ্ছ নাড়ে নাইলোটিকা

 

আনচান মন খুঁজে ফেরে প্রচ্ছায়া লোনা স্বাদ

কোথায় হারালো তাকে গরলে চুমুক দিয়ে


।।অনিকেত শামীম।।


Cover painting by Elsa Dax, Bacchus ( 2008).