ফ্রান্সে প্রকাশিত বাংলা ওয়েবজিন। প্রকাশক : প্যাট্রিসিয়া গিদাস, ভ্যান, ৫৬০০০, ব্রিটানি, ফ্রান্স। সম্পাদক : নাসরিন-জয়া হক, চয়ন খায়রুল হাবিব। Contact : choygypsy@yahoo.com

Saturday, September 16, 2023

তরঙ্গ টমাটো মিটার : চলচ্চিত্র সমালোচনা

 ।।আসিফ মুনীর।।

।। ‘১৯৭১ সেই সব দিন’ – মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক কাহিনীচিত্রের আরেকটি পালক।।

নির্মাতা হৃদি হককে অভিনন্দন। পুরো আড়াই ঘণ্টায় আন্তরিকতা ও ভালোবাসার স্পর্শ স্পষ্ট। বাবা-মা সহ আরও অনেকের আশীর্বাদ ছিল নিঃসন্দেহে। বাবা থাকলে নিশ্চয়ই গর্বিত হতেন। আমরাও গর্বিত। সিনেমাটি যারা এখনও দেখার সুযোগ পাননি, দেখা উচিত। তবে তৃতীয় সপ্তাহ চলছে, সামনের শুক্রবারে আর থাকবে কিনা জানিনা।
খুব ভালো লেগেছে মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্রের দক্ষ শিল্পীদের মিশেল – পর্দায় ও নেপথ্যে। ভালো লেগেছে যেভাবে ১৯৭১-এর ঢাকাকে দৃশ্যায়ন করা হয়েছে। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের কিছু iconic image জীবন্ত করে তোলার তারিফ করতেই হয়। একাত্তরের ঢাকা আবছা মনে থাকলেও সত্তর দশকের ঢাকা তো আমার বয়সীদের মনে আছেই। আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হোল – একাত্তরে ঢাকা শহরের মধ্যবিত্ত পরিবারের জীবন, টানা-পোড়েন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ – এসব তুলে ধরা। যেসব পরিবার একাত্তরে ঢাকা শহরেই থেকে গিয়েছিলেন, তাঁদের নিয়ে যেমন বেশি লেখালেখি বা সিনেমা হয়নি, তেমনি কেন তাঁরা ঢাকায় থেকে গেছিলেন, সে নিয়েও অনেকের মনে সংশয় আছে। এই সিনেমায় সেটা ফিকশন হলেও অনেকটাই বাস্তব চিত্র আছে।

তবে প্রেক্ষাপটটা অনেক ব্যাপক – কাহিনী নির্মাণে, গল্প বলায় মার্চ থেকে ডিসেম্বর পুরোটা না এনে আরেকটূ সংক্ষিপ্ত সময়ের গণ্ডিতে গল্পটা বললে বিভিন্ন ঘটনা, অনুভূতির আরও গভীরে যাওয়া যেত, আবেদন আরও তীব্র হোত। বেশ কয়েকটি প্রেম এবং অনেকগুলো গান একটু overwhelming লেগেছে। হয়তো আমাদের বয়স হচ্ছে – এত প্রেম আর গান হয়তো নতুন প্রজন্মের তরুণদের ভালোই লাগবে, বিশেষ করে গানগুলো সবই ভালো। আর… ১৪ ডিসেম্বরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের তালিকা নিয়ে একটা alternative narrative দাঁড় করিয়েছেন নির্মাতা, সেটার মধ্যে তাঁর মুন্সিয়ানা আছে। তবে যেহেতু ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট রেখে চলচ্চিত্রটি নির্মিত, তাই রাও ফরমান আলীর ডাইরির প্রসঙ্গটি স্পষ্ট করা যেত। তরুণ প্রজন্ম নাহলে তো জানতে পারছে না যে কোন প্রেক্ষাপটে আল-বদর, আল-শামস বাহিনী ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নভেম্বর এবং ডিসেম্বরের শুরুতে বুদ্ধিজীবী নিধনের তালিকা করেছিল।
আমি অবশ্য সিনেমা সমালোচক হিসেবে লিখতে বসিনি। চাই সিনেমাটি সবাই দেখুক – হলে বা পরে অন্য কোন মাধ্যমে। অনেকের কাছে, হৃদির কাছে শুনে একা একা দেখতে গেছি সিনেমাটি, বুঁদ হয়ে ডুবে গেছি, মাঝে মাঝেই চোখ ভিজে উঠেছে, শেষ হলে চুপচাপ হল থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নেমেছি। বড় স্ক্রিনে দেখার কারণেই হয়তো আরও বেশি আবেগ প্রবণ ছিলাম। বেরোতে বেরোতে ২-৩ জন কুশল বিনিময় করেছেন, কিন্তু সিনেমার রেশ ছিল অনেকটা সময় – তাই কথা বাড়াইনি।
হৃদিকে আবারও ধন্যবাদ। আশা করি আরও সিনেমা বানাবে – মুক্তিযুদ্ধ, তার আগের ও পরের বাংলাদেশ নিয়ে।

আসিফ মুনীর
৫/০৯/২৩
ঢাকা

লেখাটি প্রথমে ফেসবুকে আসিফ মুনীরের পেজে প্রকাশিত। লেখকের অনুমতিক্রমে 'তরঙ্গে' প্রকাশিত।