ফ্রান্সে প্রকাশিত বাংলা ওয়েবজিন। প্রকাশক : প্যাট্রিসিয়া গিদাস, ভ্যান, ৫৬০০০, ব্রিটানি, ফ্রান্স। সম্পাদক : নাসরিন-জয়া হক, চয়ন খায়রুল হাবিব। Contact : choygypsy@yahoo.com

Wednesday, December 23, 2020

সাতটা যাদুই পাহাড়

।নাসরিন-জয়া হক।


দূর থেকে মনে হয় আল্লার পাঠানো আইসক্রিম।যত কাছে যাই রংয়ের রিপেলগুলোকে খেতে ইচ্ছে করে, ওদের চারপাশে উদ্দাম নাচতে ইচ্ছে করে।

ওদের চারপাশে উদ্দাম নাচতে ইচ্ছে করে।
আইসক্রিমের ভেতর বুড়ির চুল, বুড়ির চুলে প্যাঁচানো ভাওয়াইয়া, ভাওয়াইয়ার ভেতর হাওয়া মহল, কবিতার ভেতরে গল্প, গল্পের ভেতর রুপকথা।রুপ থাকুক আর না থাকুক, সাতটা যাদুই পাহাড়ের কাছে গেলে সবাই রুপকুমার আর রুপকুমারী।ঠিক যেভাবে তরঙ্গ ওয়েবজাইনের রংগমেলা!যাদু টোনার বশীকরণে পড়তেই তো মরুভূমি ভেঙ্গে গেলাম যাদুই পাহাড়ের কাছে।যত কাছে যাই, সাত পাহাড় একে অন্যকে টেক্কা মেরে কাছে টানে।মনে হতে থাকে, একা একা চাচ্ছে, একা একা রংয়ের প্যাস্টেলে ডোবাতে চাচ্ছে। তারপর বুঝতে পারি, সেটা ভ্রান্তিবিলাস।সাত যাদুই পাহাড় একই সাথে নিজেদের উজাড় করে দিচ্ছে, একই সাথে আমার সাথে খেলছে।

সাত ভাই চম্পা, সাত বোন চম্পাবতি, কি নামে ডাকবো?যাদুই পাহাড়গুলো একাধারে নারী ও পুরুষ।ওদেরকে পাওয়া যাবে নেভাডা, লাস ভেগাসের দশ মাইল দক্ষিণে, জিন ড্রাই হ্রদের ধারে।এত ভারি পাথরে এত হালকা নাচের ছন্দ কিভাবে খেলা করে?কয়েকটা রাজহাঁস য্যানো জলকেলি সেরে পাথর সেজেছে, সবাইকে যাদুতে বশ করে পূর্ণিমায় টেনে নেবে লাগোয়া হ্রদের তলে।বানিয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সুইস শিল্পী উগো রন্ডিনোন।স্টোনহেঞ্জের রহস্যের ভেতর চাইকোভস্কির হাসের হ্রদ।আমি নাচতে থাকি।

রং আর কবিতার বিরামচিহ্ন।

একটার ওপর একটা পাথর রেখে একেকটা পথহারা যাদুই পাহাড় ৩০ ফুট উঁচু।স্তম্ভ বলা যাবে না, বসের মানা আছে, পাহাড় বলতে হবে।মোহাভি মরুভূমি ছড়িয়ে আছে উত্তর এমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া, ইউটাহ, নেভাডা, এরিজোনা অঙ্গরাজ্যে।মোহাভির পুরো এলাকা প্রায় বাংলাদেশের সমান।মোহাভির বিপুল বালুকাবেলা, পাথুরে উপত্যকা, বিস্তীর্ণ চড়াই, উৎরাইয়ের মাঝে সাতটা যাদুই পাহাড় রং আর কবিতার বিরামচিহ্ন।

স্থানিক ইন্সটলেশন হিশেবে উগো ওর পাহাড়গুলো বানিয়েছিল ২০১৬ সালের মে মাসে।কথা ছিলো, পাহাড়গুলো ওখানে থাকবে দুবছর।পাহাড় বলে কথা!তার ওপর যাদুই পাহাড়।এখনো ওরা মোহাভি মরুকে সঙ্গ দিচ্ছে ঝড়, বৃষ্টি, বালুসেচা চাঁদনিতে।নেভাডার কেন্দ্রীয় শিল্প যাদুঘর ও রাজ্য ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের অনুমোদনেসাতটা যাদুই পাহাড় ওখানে থাকতে পারবে ২০২১ এর শেষ অব্ধি।

ওরা মোহাভি মরুকে সঙ্গ দিচ্ছে।

আমি হচ্ছে প্রচণ্ড তুষারপাত, মরুঝড়, আর ফেস্টিভাল, কার্নিভালের ভক্তিন।টাটুইনে মানুষ।প্রকৃতির বাধা পেরিয়ে মানুষ যখন কিছু বানায় আমার ভালো লাগে।হিমালয় আমাকে টানে, মোহাভিও আমাকে টানে।নেভাডা মরু এলাকার আরেক ধুন্ধুমার, জ্যান্ত, শিল্পমেলার নাম বার্নিং ম্যান।ঐ বার্নিং ম্যান উৎসব যে কতজনকে কতভাবে উসকেছে।সম্ভবত উগো রন্ডিনোনের প্রেরণা এসেছে বার্নিং ম্যানের বিশাল, বিচিত্র ভাস্কর্যগুলো থেকে।চয়ন খায়রুল হাবিবের একটা পাগলুটে কবিতা আছে বার্নিং ম্যান উৎসব নিয়ে।

কোনো বৈদেশি কার্নিভাল ব ইন্সটলেশনে গেলাম, তা নিয়ে পরিচিত কারো গল্প, কবিতা পেলাম, কি যে ভালো লাগে।সাতটা যাদুই পাহাড়ের কাছাকাছি গিয়ে, ছবির দিকে তাকিয়ে কারো হয়তো আমাকে মনে পড়বে।যাদুই পাহাড় কিন্তু সব কিছু ভুলিয়ে দেয় না, বেশি বেশি করে মনে পড়িয়ে দেয়!চেষ্টা করে দেখুনতো এখানে ওখানে কুড়িয়ে পাওয়া নুড়িখন্ডগুলোতে রং চড়িয়ে এদিক ওদিক করে নিজের যাদুই পাহাড়টা বানাবার, যার কাছে গেলে মনে পড়ে যাবে এমন সব ঘটনা, ভ্রু কুচকে ভাবতে থাকবেন, 'যাহ, এটা আমি কক্ষনো করি নাই।এর পুরোটাই যাদু!পুরোটাই তরঙ্গ!'


নাসরিন-জয়া হক

২৩/১২/২০